সমরে সন্ধির নামই আসিতে পারে না। এজিদ-হানিফার রণক্ষেত্রে শুভ্র নিশান উড়িতেই পারে না! বড়ই শক্ত কথা!”
মন্ত্রীবর হামান মনের কথা এইরূপে অকপটে মুখে প্রকাশ করিতেছেন, এমন সময় দ্বাররক্ষক দ্রুতপদে মন্ত্রীপ্রবরের নিকট আসিয়া, চুপে চুপে কি কথা বলিতে লাগিল। বন্দী সচিব! তাঁহার মুখে কোন কথাই প্রকাশ হইল না। দেখিবার মধ্যে দেখা গেল,—তাঁহার চক্ষে জল। আর শুনিবার মধ্যে শুনা গেল,—তাঁহার দীর্ঘ নিঃশ্বাস। পাঠক! চুপি চুপি কথা আর কিছুই নহে, সে আমাদের জানা কথা—গত কথা, যুদ্ধের বিবরণ এবং এজিদের পলায়ন—এই সংবাদ।
চলুন, অন্যদিকে যাওয়া যাক্। শুনিতেছেন?—শুনিতে পাইতেছেন?— স্ত্রী-কণ্ঠ। বুঝিতে পারিতেছেন? কি কথা, একটু অগ্রসর হইয়া শুনুন।
“বাবা জয়নাল! তুই যে বন্দীখানা হইতে পলাইয়াছিস—বুদ্ধির কাজ করিয়াছি বাপ। আর দেখা দিস্ না। কখনও কাহারও নিকট দেখা দিস্ না! তুই যে আমার প্রাণের প্রাণ! তোকে বুকে করিলে বুক শীতল হয়—চক্ষু জুড়ায়! তুই আমাকেও দেখা দিস্ না! (উচ্চৈঃস্বরে) জয়নাল! তুই আমার—তুই আমার কোলে আয়। এ বন্দীখানায় কি অপরাধে অপরাধী হইয়া বন্দী হইয়াছি—দয়াময় ঈশ্বরই জানেন! কত কাল এ ভাবে থাকিতে হইবে, তাহাও তিনিই জানেন!? জয়নাল! তোর মুখখানির প্রতি চাহিয়াই এত দিন বাঁচিয়া আছি! তুই ইমামবংশের একমাত্র সম্বল,—মদিনার রাজরত্ন। তোর ভরসাতেই আজও পর্য্যন্ত দামেস্ক-বন্দীগৃহে তোর চিরদুঃখিনী মা প্রাণ ধরিয়া বাঁচিয়া আছে। পবিত্র ভূমি মদিনা পরিত্যাগ করিয়া যে দিন কুফায় গমন করিতে পথে বাহির হইয়াছি, সেই দিন হইতেই সর্ব্বনাশের সূচনা হইয়াছে। কত পথিক দূর দেশে যাইতেছে, কত রাজা সৈন্যসামন্তসহ বন, জঙ্গল, মরুভূমি অতিক্রম করিয়া গিরিগুহা অনায়াসে পার হইয়া নির্দ্দিষ্ট স্থানে নির্ব্বিঘ্নে যাইতেছে। তাহাদের ভ্রম নাই—পথশ্রান্তি নাই—স্বচ্ছন্দে যাইতেছে— আসিতেছে—কোনরূপ পথ-বিঘ্ন নাই, বিপদ নাই, কোন কথাই নাই! হায়