পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৫৪

হয়, আমাদের কি দুর্ভাগ্য। দিনে দুই প্রহরে ভ্রম। মহাভ্রম। কোথায় কুফা!—আর কোথায় কারবালা। সেখানে যাহা ঘটিবার ঘটিল। আত্মঘাতী হইলাম না, প্রাণও যহির হইল না। কেন হইল না?—বাপ! তোর মুখের প্রতি চাহিয়াই—বন্দীখানাতেও তোরই মুখখানি দেখিয়াই কিছু করি নাই। তুই দুঃখিনীর ধন!—দুঃখিনীর হৃদয়ের ধন!—অঞ্চলের নিধি। তোর দশা কি ঘটিল? হায়! হায়!! কেন তুই ওমর আলীর প্রাণবধের ঘোষণা শুনিয়া বন্দীগৃহ হইতে বাহির হইলি? আমার মন অস্থির—বিকারগ্রস্ত।—কি বলিতে কি বলি, তাহার স্থিরতা নাই। বন্দীখানায় থাকিলে দুর্দ্দান্ত পিশাচ মারওয়ানের হস্ত হইতে তোকে কখনই রক্ষা করিতে পারিতাম না, আমার ক্রোড় হইতে সে তোকে কাড়িয়া লইয়াই যাইত। হায়! হায়!! তোর মুখের দিকে চাহিয়া আমার কি দশা ঘটিত বাপ! তুই বুদ্ধিৱই কাজ করিয়াছিস! এজিদ জীবিত থাকিতে লোকালয়ে আর আসিস্ না। বনে, জঙ্গলে, গিরিগুহায় লুকাইয়া থাকিস্।—বনের ফল, মূল, পাতা খাইয়া জীবন ধারণ করিস্।—কখনও লোকালয়ে আসিস না। আর না হয়, যে দেশে এজিদের নাম নাই—তোরও নাম নাই—সে দেশে যাইয়া ভিক্ষা করিয়া জীবন কাটাস্। তাহাতেও শাহ্‌রেবানুর প্রাণ শীতল থাকিবে।”

 এ কি! প্রহরিগণ ছুটাছুটি করে কেন? প্রহরিগণ উর্দ্ধশ্বাসে ছুটিয়াছে। যে যেখানে ছিল, সে সেই স্থান হইতে ছুটিয়াছে। পরস্পর দেখা হইতেছে, কথা হইতেছে—কিন্তু বড় সাবধানে—চুপে চুপে। কথা কহিতেছে—পরামর্শ করিতেছে—সাবধান হইতেছে—আত্মরক্ষার উপায় দেখিতেছে।—কেন?—কি সংবাদ? দেখুন—আশ্চর্য্য দেখুন! একজন প্রহরী ছুটিয়া আসিয়া বৃদ্ধ মন্ত্রী হামানের কানে কানে চুপি চুপি কি কহিয়া, ঐ দেখুন কি করিল। দ্রুতহস্তে লৌহশৃঙ্খল কাটিয়া ফেলিল এবং হোসেনপরিবার ব্যতীত অন্য অন্য বন্দীগণকে কারাগার হইতে মুক্ত করিয়া সত্বরে বাহির করিয়া দিল। বন্দীগণ অবাক্।—কেহ কোন কথা কহিতেছে না। সকলেই যেন ব্যস্ত। পলাইতে পারিলেই রক্ষা!—জীবন রক্ষা।