পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬৩
এজিদ বধ পর্ব্ব—দ্বিতীয় প্রবাহ

সেই চিন্তাই এইক্ষণে অধিকতর হইল। অশ্বারোহী সন্ধানী পাঠাইয়া এখনই সংবাদ আনিবে! আমরা রাজপুরী পর্য্যন্ত যাইতে না যাইতেই যুদ্ধস্থানের সংবাদ অবশ্যই পাইব—আশা করি।”

 আদেশমাত্র সন্ধানী দূতের অশ্ব ছুটিল। শুভ্র নিশানের অগ্রভাগ আরোহীর মস্তকোপরি বায়ুর সহিত ক্রীড়া করিতে লাগিল।

 গাজী রহ্‌মান পুনরার মস্‌হাব কাকাকে সম্বোধন করিয়া বলিতে লাগিলেন, “নগর-প্রবেশের সময় পৃথক পৃথক পথে সৈন্যদলকে প্রবেশ করিতে অনুমতি দেওয়া হইয়াছে। যে দিক হইতে যে দল রাজভবন পর্য্যন্ত যাইবে, সে দিক রক্ষার ভার তাহাদের উপর থাকিবে। যে পর্য্যন্ত সৈন্যদল পুরীমধ্যে দীন মোহাম্মদী নিশান উড়িতে না দেখিবে, জয়নাল আবেদীনের বিজয়-ঘোষণা যতক্ষণ পর্য্যন্ত কর্ণে না শুনিবে, সে পর্য্যন্ত কোন দলই পুরী মধ্যে প্রবেশ করিতে পারিবে না। মোহাম্মদ হানিফার না সংবাদ জানিয়া, এজিদ-পুরীতে প্রবেশ করিতে ইচ্ছা হইতেছে না।”

 “ভালই, সংবাদ না জানিয়া এজিদ-পুরীতে যাইব না। ভাল কথা, এই অবসরে বন্দীগণকে উদ্ধার করিলে ক্ষতি কি?”

 “না, না তাহা হইতে পারে না, অগ্রে মহারাজের সংবাদ, তাহার পর পুরী-প্রবেশ। পুরী-প্রবেশ করিয়াই সর্ব্বাগ্রে রাজসিংহাসনের মর্য্যাদা রক্ষা, পরে বন্দীমুক্তি।”

 “তবে ক্রমে অগ্রসর হওয়া যা’ক্। ঐ আমাদের সৈন্যগণের জয়ধ্বনি শুনা যাইতেছে। যাহারা ভিন্ন ভিন্ন পথে গিয়াছিল, তাহা শীঘ্রই আমাদের সহিত একত্রে মিশিবে।”

 আবার সঙ্কেত-সূচক বাঁশী বাজিয়া উঠিল। মহারাজ জয়নাল আবেদীনের চন্দ্রাতপসংযুক্ত জাতীয় নিশান হেলিয়া দুলিয়া চলিতে লাগিল। “জয় মহারাজ আবেদীনের জয়!” সৈন্যগণের মুখে বারবার উচ্চৈঃস্বরে উচ্চারিত হইতে লাগিল। রাজপথে অন্য লোকের গতিবিধি নাই। এজিদ-পক্ষের জন-প্রাণীর নামমাত্রও নগরে নাই। সুন্দর সুন্দর বাড়ী-ঘর সকল শূন্য অবস্থায় পড়িয়া আছে।