পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৬৪

 কিছু দূর যাইতেই দামেস্ক-রাজপুরীর স্বরঞ্জিত অত্যুচ্চ প্রবেশদ্বার সকলের নয়নগোচর হইল। এত সৈন্য, এত অশ্ব, এত উষ্ট্র, এত নিশান এত ডঙ্কা, এত কাড়া-নাকাড়া রাজপথ জুড়িয়া হুলুস্থুল ব্যাপার করিতে করিতে যাইতেছে! ঐ সকল কোলাহল ভেদ করিয়া দ্রুতগতি অশ্বসঞ্চালনের ‘তড়াক তড়াক’ পদশব্দ সকলেরই কর্ণকুহরে প্রবেশ করিল। কিন্তু গাজী রহ্‌মানের আজ্ঞা ব্যতীত-বলিতে কি, একটি মক্ষিকারও উড়িয়া বসিবার ক্ষমতা নাই! কাহার সাধ্য—স্থিরভাবে দাঁড়াইয়া পশ্চাৎ ফিরিয়া দেখে? কাহার সাধ্য,—তাহার সন্ধান লয়? কে সে লোক,— তাহার পরিচয় জিজ্ঞাসা করে?

 মনের কথা মন হইতে সরিতে না সরিতেই বাঁশীর স্বরে কয়েকটি কথা কর্ণে প্রবেশ করিল—“আম্বাজী সংবাদবাহী যুদ্ধক্ষেত্র হইতে সংবাদ লইয়া আসিতেছে। রাস্তা পরিষ্কার। দ্বিতীয়বার বাঁশী বাজিল, শব্দ হইল—“সাবধান!”

 সকলেই সাবধান হইলেন। সংবাদবাহীর অশ্ব যেন বায়ুভরে উড়িয়া সকলের বামপার্শ্ব হইয়া চক্ষের পলকে গাজী রহ্‌মানের নিকট চলিয়া গেল। গাজী রহ্‌মানের নিকটস্থ হইয়া অভিবাদন পূর্ব্বক সংবাদবাহী বলিতে লাগিল, “দামেস্ক নগরের মধ্য হইতে রণক্ষেত্র পর্য্যন্ত জীবন্ত জীবের মুখ দেখিতে পাইলাম না। নগর-অভ্যন্তরস্থ পথ, রণক্ষেত্রে গমনের পথ এবং অন্য অন্য পথ-ঘাট মৃতদেহে পরিপূর্ণ,—গমনে মহাকষ্ট। ধরাশয়ী খণ্ডিত দেহসকলের সে দৃশ্য দেখিতেও মহাকষ্ট। বহু কষ্টে রণক্ষেত্র পর্য্যন্ত যাইয়া দেখিলাম—সব শবাকার। খণ্ডিত নরদেহ এবং অশ্বদেহ সকল কতক অল্প রক্তে মাখা, কতক রক্তে প্লাবিত। দেখিলাম: মরুভূমিতে রক্তস্রোত প্রবাহিত। কি ভীষণ রণ! এজিদ-শিবিয়ের ভস্মাবশেষ হইতে এখনও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অগ্নিশিখাসহ ধূমরাশি অনবরত গগনে উঠিতেছে। কিঞ্চিৎ অগ্রসর হইয়াই দেখিলাম যে, একজন ফকির রণক্ষেত্রের মধ্যে খণ্ডিত দেহসকলের নিকটে যাইয়া কি যেন দেখিয়া দেখিয়া যাইতেছে। তাহার চলনভঙ্গী অনুসন্ধানের ভাব দেখিয়া যথার্থ ফকির বলিয়া সন্দেহ হইল। ত্রস্তে ঘোড়া