পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৬৬

 সংবাদবাহী অভিবাদন করিয়া বিদায় হইল। গাজী রহ্‌মান আর অপেক্ষা করিলেন না। রাজপুরীমধ্যে অগ্রে পদাতিক সৈন্য-প্রবেশের অনুমতি করিলেন। তাহার পর অশ্বারোহী বীরগণ পুরীমধ্যে প্রবেশের অনুমতি পাইলেন। তৎপরে মহারথিগণ এজিদপুরীমধ্যে প্রবেশ করিতে অগ্রসর হইলেন। বীর-দর্পে জয় ঘোষণা করিতে করিতে সকলেই প্রবেশ করিলেন। সে বীর-দর্পে, জয়-রবে রাজপ্রাসাদ কাঁপিতে লাগিল, সিংহাসন টলিল। সে রব দামেস্কের ঘরে ঘরে প্রবেশ করিল।

 গাজী রহ্‌মান, মস্‌হাব কাক্কা, ওমর আলী ও অন্যান্য রাজগণ মহারাজাধিরাজ জয়নাল আবেদীনকে ঘিরিয়া “বিস্‌মিল্লাহ্” বলিয়া পুরীমধ্যে প্রবেশ করিলেন। পুরীমধ্যে একটি প্রাণীও তাঁহাদের নয়নগোচর হইল না। সকলই রহিয়াছে, যেখানে যাহা প্রয়োজন,—সকলই পড়িয়া রহিয়াছে,—এখনই যেন পুরবাসীরা কোথায় চলিয়া গিয়াছে। পরে সকলে প্রাঙ্গণে উপস্থিত হইলেন। সেখানেও ঐ ভাব; কেহই নাই। অস্ত্রধারী, অশ্বারোহী, পদাতিক প্রভৃতি যাহা কিছু নয়নগোচর হয়,—সকলই তাঁহাদের। ক্রমে ক্রমে তৃতীয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত; সেখানেও ঐ কথা। গৃহসামগ্রী যেখানে যেরূপ সাজান, ঠিক তাহাই আছে, কোনরূপ রূপান্তর হয় নাই। গৃহবাসীরা এখনই গৃহ ছাড়িয়া—এখনই তাড়াতাড়ি জিনিষপত্র ফেলিয়া যেন কোথায় চলিয়া গিয়াছে। এইরূপে প্রাসাদের পর প্রাসাদ, কক্ষের পর কক্ষ, শেষে অন্তপুর-মধ্যে তাঁহারা প্রবেশ করিলেন। কি আশ্চর্য্য-সেখানেও সেইভাব। সকলই আছে, রাজপুরী মধ্যে যাহা যাহা প্রয়োজন,—সকলই রহিয়াছে। কিন্তু তাঁহারা আপন সৈন্যসামন্ত ও তুরী, ভেরী, নিশানধারিগণ ব্যতীত অন্য কাহাকেও দেখিতে পাইলেন না। কক্ষে কক্ষে সন্ধান করিয়াও জন প্রাণীর দেখা পাইলেন না; ভাবে বোধ হইল, অন্তঃপুরবাসীরা যেন কোন গুপ্তস্থানে লুকাইয়া রহিয়াছে। কোথায় সে গুপ্ত স্থান?—তাহারও কোন সন্ধান করিতে পারিলেন না। জয়ের পর—যুদ্ধ জয়ের পর, বিপক্ষ রাজপুরীতে প্রবেশের পর,—রাজপ্রাসাদ অধিকারের পর যাহা হইয়া থাকে, তাহাই আরম্ভ হইল। দুই হস্তে লুট। প্রথমতঃ, সৈন্যগণের লুট, —তারপর যে যাহা পাইল, তাহা আপন অধিকারে