পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬৭
এজিদ বধ পর্ব্ব—দ্বিতীয় প্রবাহ

আনিল। কত গুগুগৃহের কপাট ভগ্ন হইল। হীরা, মতি, মণি, কাঞ্চন,— কত রাজবসন, কত মণিমুক্তাখচিত আভরণ, রাজব্যবহার্য্য দ্রব্য। যাহার হস্তে যাহা পড়িতেছে,—সেই-ই তাহা লইতেছে। আর যাহা নিষ্প্রয়োজন মনে করিতেছে, তাহাই ভাঙ্গিয়া ছারখার করিতেছে।

 নব-ভূপতি মহারথিগণে বেষ্টিত হইয়া, ঈশ্বরের নাম করিতে করিতে রাজপ্রাসাদে উপস্থিত হইয়া “আল্‌হাম্‌দ্‌-লিল্লাহ্” বলিয়া রাজসিংহাসনে উপবেশন করিলেন। বিজয়-বাজনা বাজিতে লাগিল। রাজ-নিশান শতবার শির নামাইয়া দামেস্কাধিপতির বিজয়-ঘোষণা করিল। অন্যান্য রাজগণ নতশিরে অভিবাদন করিয়া রাজ-সিংহাসনের মর্য্যাদা রক্ষা করিলেন এবং রক্তমাখা তরবারি হস্তে যথোপথুক্ত আসনে রাজাদেশে উপবেশন করিলেন। সৈন্যগণ নিষ্কোষিত অসি হস্তে নব ভূপতির বিজয় ঘোষণা করিয়া নতশিরে অভিবাদন করিলেন।

 গাজী রহ্‌মান রাজসিংহাসন চুম্বন করিয়া বলিতে লাগিলেন, “বিভিন্ন দেশীয় মহামাননীয় ভূপতিগণ!। রাজস্যগণ! মাননীয় প্রধান প্রধান সৈন্যাধ্যক্ষগণ! সৈন্যগণ! যুদ্ধ-সংশ্রবী বীরগণ এবং সভাস্থ বন্ধুগণ! দয়াময় ঈশ্বরের প্রসাদে এবং আপনাদের বলবিক্রমের সহায়ে ও সাহায্যে আজ জগতে অপূর্ব্ব কীর্ত্তি স্থাপিত হইল। ধর্ম্মের জয়,—অধর্ম্মের ক্ষয়, তাহারও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত জ্বলন্ত রেখায় ইতিহাসের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় অঙ্কিত রহিল। এই দামেস্ক-সিংহাসন আজ বক্ষ পাতিয়া যে ভূপতিকে উপবেশন-স্থান দিয়াছে, ইহা এই নব ভূপতিরই পৈতৃক আসন। যে কারণে এই আসন হজরত মাবিয়ার করতল হয়, তদ্বিবরণ এক্ষণে উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন। বোধ হয়, আপনারা সকলেই তাহা অবগত আছেন। মহাত্মা মাবিয়া যে যে কারণে এজিদের প্রতি নারাজ হইয়া যাঁহাদের রাজ্য তাঁহাদিগকে পুনরায় প্রতিদান করিতে কৃতসঙ্কল্প হইয়াছিলেন; যে কৌশলে এজিদ মহামান্য প্রভু হাসান-হোসেনকে বঞ্চনা করিয়া এই রাজ্য যে ভাবে নিজ অধীনে রাখিয়াছিলেন, সে বিষয়ও কাহারও অবিদিত নাই। ইমাম-বংশ একেবারে ধ্বংস করিয়া নির্ব্বিবাদে দামেস্ক এবং মদিনারাজ একচ্ছত্ররূপে ভোগ করিবার অভিলাষ