পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৬৮

করিয়া যে কৌশলে এজিদ—প্রভু হাসানের প্রাণ বিনাশ করিয়াছিলেন, যে কৌশলে ইমাম হোসেনকে নূরনবী মোহাম্মদের রওজা হইতে বাহির করিয়া কুফায় পাঠাইয়াছিলেন, তাহা সকলেই শুনিয়ছেন। মহাপ্রান্তর কারবালার ঘটনা যদিও আমরা চক্ষে দেখি নাই, কিন্তু মদিনাবাসীদিগের মুখে যে প্রকার শুনিয়াছি, তাহা আমার বলিবার শক্তি নাই। যাহা ঈশ্বরের অভিপ্রায় ছিল, তাহাই হইয়াছে। তাহার পর যে ঘটনা ঘটিয়াছে, তাহা ত আপনারা স্বচক্ষেই দেখিয়াছেন।”

 “যে দিন দামেস্ক-প্রান্তরে আমাদের শেষ আশা—মুসলমান জগতের শেষ আশা—ইমাম বংশের একমাত্র রত্ন, পবিত্র সৈয়দ-বংশের একমাত্র অমুল্য নিধি,—এই নবীন মহারাজ জয়নাল আবেদীনকে এজিদ শূলে চড়াইয়া প্রাণবধের আজ্ঞা করিয়াছিলেন, সে দিন এজিদ-প্রেরিত সন্ধিপ্রার্থী দূতবরকে যে যে কথা বলিয়া যুদ্ধে ক্ষান্ত দিয়াছিলাম, মহাশক্তিসম্পন্ন ভগবান আজ আমাদিগকে সেই শুভদিনের মুখ দেখাইলেন, আমাদের পূর্ব্ব প্রতিজ্ঞা রক্ষা করাইলেন। কিন্তু আশা মিটিল না, মনোবিকার মন হইতে একেবারে বিদূরিত হইল না,—সম্পূর্ণরূপে মনের আনন্দ অনুভব করিতে পারিলাম না। ঈশ্বরের লীলা কে বুঝিবে? সিংহাসন অধিকারের পূর্ব্বে মহারাজ হানিফার তরবারি এজিদ-রক্তে রঞ্জিত হইতে দেখিলাম না। সে মহাপাপীর পাপময় শোণিতবিন্দু মোহাম্মদ হানিফার তরবারি বহিয়া দামেস্ক-ধরায় নিপতিত হইতে দেখিলাম না। সেই স্বেচ্ছাচারী, পরশ্রীকাতর, দামেস্কের কলঙ্ক, মহাত্মা মাবিয়ার মনোবেদনাকারী এজিদের শির দামেস্ক-প্রান্তরে লুণ্ঠিত হইতে দেখিলাম না। আক্ষেপ রহিয়া গেল। আরও আক্ষেপ এই যে, এই শুভ সময়ে রাজশ্রী মোহাম্মদ হানিফাকে রাজসিংহাসনের পাশে উপবিষ্ট দেখিলাম না। সময়ে সকলই হইল। কিন্তু সুখসময়ে উপস্থিত দুইটি অভাব রহিয়া গেল। না জানি বিধাতা ইহার মধ্যে কি আশ্চর্য্য কৌশল করিয়াছেন দয়াময় ভগবান কি কৌশল করিয়া, কি কৌশলজাল বিস্তারে আম্বাজ-অধিপতিকে কোথায় রাখিয়াছেন, তাহা তিনিই জানেন। যে পর্য্যন্ত সন্ধান পাইলাম, তাহাতে আশঙ্কার কথা কিছুই নাই। তবে সম্পূর্ণরূপে মনের আনন্দ অনুভব করিতে