পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৭০

তুল্য বীর আর কেহ ছিলেন না, সেই মহাবীর হাম্‌জাকেও একটি সামান্য স্ত্রীলোেক-হস্তে প্রাণ দিতে হইয়াছিল। পয়গম্বরই হউন, আর মহাবীর গাজীই হউন,—উচ্চমস্তকে, উচ্চগৌরবে, নিষ্কলঙ্কে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শুভ্রবসনে এই মায়াময় কুহকিনী ধরণী-পৃষ্ঠ হইতে সরিয়া যাইতে কেহই পারেন না।—ইহাতে মোহাম্মদ হানিফা—আমাদের আম্বাজ-অধীশ্বর যে, অক্ষত শরীরে নিষ্কলঙ্কভাবে সর্ব্বদিকে সুবাতাস বহাইয়া, বিজয়নিশান উড়াইয়া, বিজয়ডঙ্কা বাজাইয়া, জগতে অক্ষুন্ন কীর্ত্তিস্তম্ভ স্থাপন করিয়া সুখস্বচ্ছন্দে যাইবেন, ইহা ত কখনই বিশ্বাস হয় না। মহাকৌশলী অদ্বিতীয় ঈশ্বরের এ লীলার অর্থ কে বুঝিবে?—এ গুপ্ত রহস্য ভেদ কে করিবে? ধার্ম্মিক এবং ঈশ্বর-প্রমিক জীবনই কি এত কণ্টকময়—সে জীবনের কি এত বিপদ,—এত যন্ত্রণা! অপ্রেমিক অধার্ম্মিক এ জগতে এক প্রকার সুখী, অনেক কার্য্যই তাহারা সুন্দর মত সর্ব্বাঙ্গীন সুন্দরের সহিত সম্পন্ন করিয়া লয়!”

 “ঈশ্বর-প্রেমিকগণ এবং তাঁহাদের পরিবারগণ কেন সংসারচক্রের আবর্ত্তে পড়িয়া এত ক্লেশ, এত দুঃখ ভোগ করেন, তাহার কারণ হয় ত অনেকেই অনুসন্ধান করেন নাই। তাহা বুঝিলে এ প্রশ্নের উত্তরের, বোধ হয়, অতি সহজেই মীমাংসা হয়। প্রেমিকের প্রেম পরীক্ষাই ইহার মূলতত্ত্ব এবং তাহাই উদ্দেশ্য; দৈহিক কষ্ট জগতে কিছুই নহে। আত্মার বল এবং পরকালের সুখই যথার্থ সুখ,—অনন্তধামের অনন্ত সুখভোগই যথার্থ সম্ভোগ!”

 “দামেস্ক নগরের মাননীয় বন্ধুগণ! আপনারা পূর্ব্ব হইতেই ইমামবংশের প্রতি মনে মনে ভক্তি ও শ্রদ্ধা করিয়া আসিতেছেন, তাহার প্রমাণ ইতিপূর্ব্বে আমাদের এই নবীন ভূপতির কারাগারে আবদ্ধ অবস্থায় খোৎবা পাঠ-সময়ের ঘটনার কথা শুনিয়াছি। ভাগ্যক্রমে অদ্য স্বচক্ষেই তাহাও দেখিতেছি। ঈশ্বর আপনাদের মঙ্গল করুন। রাজানুগ্রহ চিরকাল আপনাদের প্রতি সমভাবে থাকুক,—ইহাই সেই সর্ব্বাধীশ্বরের নিকট কায়মনে প্রার্থনা করি।”

 দামেস্ক নগরস্থ ইমামভক্ত দলপতিগণের মধ্য হইতে মহাসম্ভ্রান্ত এবং