পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৭১
এজিদ বধ পর্ব্ব—দ্বিতীয় প্রবাহ

মাননীয় কোন মহোদয় দণ্ডায়মান হইয়া বলিতে লাগিলেন, “আমরা চিরকালই হজরত নূরনবী মোহাম্মদের আজ্ঞাবহ দাসানুদাস, মহাবীর হজরত মোরতজা আলীর চিরভক্ত। মধ্যে কয়েক দিন মহামহিম হজরত মাবিয়ার আনুগত্য স্বীকার করিয়া নিশ্চিন্তভাবে ধর্ম্মকর্ম্ম রক্ষা করিয়া সংসারযাত্রা নির্ব্বাহ করিয়াছি। হজরত মাবিয়ার পীড়ার সময় হইতেই আমাদের দুর্দ্দশার সুচনা আরম্ভ হইয়াছিল। তাহার পর মন্ত্রিপ্রবর হামানের অপদস্থ হওয়ায় এবং এজিদ-দরবারে বৃদ্ধ মন্ত্রীর বয়সদোষে বুদ্ধি-বিবেচনায় ভ্রম জন্মিয়াছে, —মারওয়ানের বিবেচনায় এই কথা সাব্যস্ত হওয়ার পর হইতেই আমাদের দুর্দ্দশার পথ সহজেই পরিষ্কার হইয়াছে। আর কোথায় যাই, এক প্রকার জীবন্মৃতপ্রায় হইয়া দামেস্কে বাস করিতেছিলাম; এইক্ষণে দয়াময় জগদীশ্বর, যাঁহাদের রাজ্য তাঁহাদের হস্তেই পুনঃ অর্পণ করিলেন; আমাদের জ্বালা, যন্ত্রণা, দুঃখ সকলই ইহকাল পরকাল হইতে উপশম হইল। আমরা দুই হস্ত তুলিয়া সর্ব্বশক্তিমান্ ভগবান সমীপে প্রার্থনা করিতেছি যে, মহারাজাধিরাজ জয়নাল আবেদীনের রাজমুকুট চিরকাল অক্ষুন্নভাবে পবিত্র শিরে শোভাবর্দ্ধন করুক। আর আমরাও মনের সহিত রাজসেবা করি, পুণ্য ভূমি মদিনার অধীনস্থ হইয়া চিরকাল গৌরবের সহিত সংসারযাত্রা নির্ব্বাহ করিতে থাকি। মদিনার অধীনতা স্বীকার করিতে কাহার না ইচ্ছা হয়? আমরা সর্ব্বান্তঃকরণে মহারাজ জয়নাল আবেদীনের মঙ্গল কামনা করি। আজ মনের আনন্দে নবীন মহারাজের বিজয়-ঘোষণা করিয়া মনের আবেগ দূর হইল; শান্তি-সুখে সুখী হইয়া ভাগ্যবান্ হইলাম।”

 বক্তার কথা শেষ হইতে না হইতেই শাহী দরবার হইতে সহস্র মুখে “জয় জয়নাল আবেদীন” রব উচ্চারিত হইয়া প্রবাহিত বায়ু সহিত প্রতিযোগিতায় প্রতিধ্বনি হইতে লাগিল, “জয় জয়নাল আবেদীন!” সকলেই নতশিরে নবীন মহারাজের সিংহাসন চুম্বন করিলেন এবং যথোপযুক্ত উপঢৌকনাদি রাজগোচর করিয়া অধীনতা স্বীকার করিলেন, ইহকাল এবং পরকালের আশ্রয়দাতা, রক্ষাকর্ত্তা বলিয়া শত শত বার সিংহাসন চুম্বন করিলেন। সে সময় সাদিয়ানা-বাদ্য বাদিত না হইয়া রণবাদ্যই বাজিতে