পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৭৯
এজিদ বধ পর্ব্ব-তৃতীয় প্রবাহ

বিধর্ম্মীয় হস্ত হইতে ধর্ম্ম রক্ষা, স্বাধীনতা রক্ষা, জাতীয় জীবন রক্ষা হেতু নারীজীবনে রণ-বেশ!—কোমল করে লৌহ অস্ত্র! মদিনা! হৃদয়ের সহিত তোমায় নমস্কার করি।”

 “প্রভু আমার রণ-রঙ্গিণীদিগকে ভগিনী সম্ভাষণে কত অনুনয় বিনয় করিয়া যুদ্ধ-গমনে তাঁহাদিগকে ক্ষান্ত করিয়া স্বয়ং যুদ্ধে গমন করিলেন। ঈশ্বরকৃপায় মদিনাবাসীর সাহায্যে যুদ্ধে জয়লাভ হইল। বিজয়ী বীরগণকে মদিনা ক্রোড় পাতিয়া কোলে লইল। আমার ভাবনা, চিন্তা, এজিদের ভয়—হৃদয় হইতে একেবারে সরিয়া গেল। এজিদের পক্ষ পরাস্ত—আনন্দের সীমা নাই। কিন্তু একটি কথা মনে হইল। এ যুদ্ধের কারণ কি? প্রকাশ্যে যাহাই থাকুক, লোকে যাহাই বলুক, রাজ্যলাভের সঙ্গে সঙ্গে জয়নাব-লাভের আশা যে, এজিদের মনে না ছিল, তাহা নহে! ঈশ্বরই রক্ষা করিলেন। কিন্তু জাএদার চিন্তা—জয়নাবের সুখ-তরী বিষাদ-সিন্ধুতে বিসর্জ্জন করা। সোনায় সোহাগা মিশিল! মায়মুনার ছলনায় জাএদা ইহকালের কথা ভুলিয়া সপত্নীবাদের হিংসার বশবর্ত্তিনী হইয়া স্বহস্তে স্বামীর মুখে বিষ ঢালিয়া দিল। খর্জ্জুর উপলক্ষ্য মাত্র। জাএদার কার্য্য জাএদা করিল, কিন্তু ঈশ্বর রক্ষা করিলেন,—প্রভু প্রাণে বাঁচিলেন, প্রভু রক্ষা পাইলেন! কিন্তু শত্রুর ক্রোধ দ্বিগুণ, চতুর্গুণ বাড়িয়া প্রাণবিনাশের নূতন চেষ্টা হইতে লাগিল। চক্রীর চক্র ভেদ করা কাহারও সাধ্য নহে। সেই মায়মুনার চক্রে, সেই জাএদার প্রদত্ত বিষেই প্রভু আমার জগৎ কাঁদাইয়া, জগতে চির বিষাদ-বায়ু বহাইয়া স্বর্গধামে চলিয়া গেলেন। জয়নাবের কপাল!—পোড়া কপাল আবার পুড়িল।— আবার বৈধব্যব্রত—সংসার-সুখে জলাঞ্জলি!”

 “হায়! হায়!!—পাপীয়সী জাদা আমাকে মহাবিষ না দিয়া প্রভু হাসানকে কেন বিষ দিয়া প্রাণসংহার করিল? আমার পরমায়ু শেষ করিয়া জগৎ হইতে আমাকে দূর করিলে, আবার সে যেই সেই-ই হইত!— আবার স্বামীর ভালবাসা নূতন প্রকারে পাইত। তাহার মনের বিশ্বাসেই বলি—হতভাগিনী জয়নাব জগৎ-চক্ষু হইতে চিরদিনের মত সরিলে—তাহার স্বামী আবার তাহারই হইত। স্বামীর ভালবাসা-ক্ষেত্র হইতে জয়নাব-কণ্টক দূর হইলে