পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৮০

আবার প্রণয়-কুসুম শতদলে বিকশিত হইত। সে তাহা করিল না কেন? পাপীয়সী সেই সুপ্রশস্ত সরল পথে পদ-বিক্ষেপ না করিয়া এ পথে,—স্বামীসংহার পথে কেন হাঁটিল?—মায়মুনার পরামর্শ!—আর হিংসার সহিত দুরাশার সমাবেশ—এই দুইএর একত্র সম্মিলন। ক্ষুদ্র বুদ্ধিমতী বাহ্যিক সুখপ্রিয় বিলাসিনী রমণীগণের আকাঙ্খা উত্তেজনা,— রত্ন-অলঙ্কার।—মহামুল্য বসনের অকিঞ্চিৎকর আকর্ষণ।—জাএদা অতুল ধনসম্পত্তির অধিকারিণী হইবে। শেষে পাটরাণী হইবারও আশার কুহক তাহার মনে! পাটেশ্বরী হইয়া দামেস্ক-রাজ-সিংহাসনে এজিদের বাম পার্শ্বে তাহার বসিবার ইচ্ছা! স্ত্রীজাতি প্রায়ই বাহ্যিক সুখ-সম্ভোগপ্রিয়া। প্রভু হাসান-সংসারে বিলাসিতার নামমাত্র ছিল না। সে অন্তঃপুরে রমণীর মনোমুগ্ধকারী সাজ-সরঞ্জাম ও উপকরণের প্রচলন—ব্যবহার দূরে থাকুক,—ধর্ম্মচিন্তা, ধর্ম্মভাব, বিশুদ্ধ আচরণ ভিন্ন সুখ-সম্পদের নামগন্ধের অণুমাত্রও কাহারও মনে ছিল না।—এজিদ-অন্তঃপুরে জগতের সুখে সুখী হইবার সকলি আছে; এজিদের মতে মত দিয়া সেই প্রকার সুখসাগরে ভাসিতে আর বাধা কি? কয় দিন—স্ত্রীলোকের মন কয় দিন? দুরাশার বশবর্ত্তিনী হইয়াই জাএদার মতিচ্ছন্ন! মদিনার সিংহাসন শূন্য! প্রভুর জলপানের সোরাহীতে হীরকচূর্ণ!—হায়! এক কথা মনে উঠিতে কত কথাই না মনে উঠিতেছে! এ কথা শুনে কে? মন ত কিছুতেই প্রবোধ মানে না। এখন এ সকল কথা মনে উঠিল কেন? উঁহু। আমি ত স্বামীর পদতলেই শয়ন করিয়াছিলাম। প্রভু আমার বক্ষোপরি পবিত্র পদ দুখানি রাখিয়া নিদ্রাসুখ অনুভব করিতেছিলেন। পাপীয়সী জাএদা কোন্ সময়ে কি প্রকারে গৃহমধ্যে প্রবেশ করিল। বিবি হাস নেবানুর এত সতর্কতা, এত সাবধানতা—খাদ্য সামগ্রী, পানীয় জলে এত যত্ন,—ইহার মধ্যে কি প্রকারে কি করিল? আমার কপাল পুড়িবে, তাহা না হইলে নিদ্রাঘোরে অচেতন হইলাম কেন? কত রাত জাগিয়াছি, কত নিশা বসিয়া কাটাইয়াছি, হায়! হায়!! সে রাত্রে নিদ্রার আকর্ষণ এতই হইল? জাএদা কক্ষমধ্যে আসিয়া পানীয় জলে বিষ মিশাইল, কিছুই জানিতে পারিলাম না।— পাপীর অধোগতি—দুর্গতি ভিন্ন সদ্গতি কোথায়? জাএদার আশা মিটিল