কল্পনায় আঁখি! তবে কথা এই যে, তাহাই দেখিবেন, না হানিফা এক্তিদের পশ্চাৎ ঘোড়া চালাইয়া কি করিতেছেন, তাহাই দেখিবেন? আমার বিবেচনায় শেষ দৃশ্যই এক্ষণে প্রয়োজন। এজিদ-বধের জন্যই সকলেই উৎসুক। গাজী রহমানেরও ঐ চিন্তাই এখন প্রবল। মোহাম্মদ হানিফার কি হইল? এজিদের ভাগ্যেই বা কি ঘটিল?
নবীন মহারাজ, তাঁহার মাতার পদধূলি মাথায় মাখিয়া অন্য অন্য গুরুজনের চরণ বন্দনা করিয়া বন্দীখানা হইতে বিজয়ডঙ্কা বাজাইতে বাজাইতে, জয়পতাকা উড়াইতে উড়াইতে প্রিয়পরিজনসহ রাজপুরী মধ্যে পুনঃ প্রবেশ করুন, আমরা মোহাম্মদ হানিফার অন্বেষণে যাই। চলুন, এজিদের অশ্বচালনা দেখি।
চতুর্থ প্রবাহ
আশা মিটিবার নহে। মানুষের মনের আশা পূর্ণ হইবার নহে। ঘটনার সূত্রপাত্র হইতে শেষ পর্যন্ত অনেকের মনে অনেক প্রকারের আশার সঞ্চার হয়। আশার কুহকে মাতিয়া অনেকেইপথে—বিপথে ছুটিয়া বেড়ায়। ঘটনাচক্রে যতদুর গড়াইয়া লইয়া যায়, তাহাতেই বোধ হয় যেন পূর্বব আশা পূর্ণ হইল। এই পূর্ণবোধ হইতে হইতে দুই তিন চারি, এমন কি, পঞ্চ প্রকারের আশা পঞ্চাশ ভাগে, পঞ্চ শত বিভাগে ঘটনালিপ্ত মানুষের হৃদয়কাশে সচঞ্চল চঞ্চলার ন্যায় ছুটিতে থাকে,—খেলিতে থাকে। জীবনের সহিত আশার সম্বন্ধ। আকাঙক্ষার নিবৃত্তি, আশার শাস্তি, জীবনের ইতি—এই তিনেই এক, আবার একেই তিন। সুতরাং জীবন্ত দেহে মনের আশ মিটিবার নহে। আশা মিটিল না—মোহাম্মদ হানিফার আশা পূর্ণ হইল না।
যুগল অশ্ব বেগে ছুটিয়াছে। এজিদের অশ্ব অগ্রে রহিয়াছে। হানিফার মনের আশা, এজিদকে না মারিয়া জীবন্ত ধরিবেন, পূর্ব প্রতিজ্ঞানুসারে তাহাকে কয়েকটি কথা জিজ্ঞাসা করিবেন, কিন্তু তাহা পারিতেছেন না।