মোহাম্মদ হানিফা পুনরায় উচ্চৈঃস্বরে বীরবিক্রমে বলিতে লাগিলেন, “এজিদ। বহু পরিশ্রমের পর তোর দেখা পাইয়াছি। তুই কথনই চক্ষের অন্তরাল হইতে পারিবি না। তুই জানিস, হানিফার বল-বিক্রম প্রকাশের আজই শেষ দিন। আজই হানিফারও ক্রোধাঙ্কের শেষ অভিনয়। আজই বিষাদের শেষ,বিষাদ-সিন্ধুর শেষ,—তোর জীবনের শেষ। ঐ দেখ, সূর্য্য অস্ত যায়। এই অস্তের সহিত কত অস্তের যে যোগ আছে, তাহা কে বলিতে পারে। আমি দেখিতেছি, তিন অস্ত একত্র মিশিবে, একসঙ্গে একযোগে ঘটিবে—তো পরমায়ু, দামেস্কের স্বাধীনতা এবং উপস্থিত সূর্য্য। চাহিয়া দেখ,যদি জ্ঞানের বিপর্যয় না ঘটিয়া থাকে, তবে চাহিয়া দেখ,—গমনমুখ সূর্য্য কেমন চাকচিক্য দেখাইয়া স্বাভাবিক নিয়ম রক্ষা করিতেছে, নির্বাণোম্মুখ দীপও ঐরূপ তেজে জুলিয়া ওঠে। প্রাণবিয়োগ-সময়ে শয্যাশায়ী রোগীর নাড়ীর বলও ঐরূপ সতেজ হয়। তোর কিঞ্চিৎ অগ্রসরতাও তাহাই। আর বিলম্ব নাই। যে এতটুকু অগ্রসর হইয়াছিস, সে বাঁচিবার জন্য নহে, মরিবার জন্য। মরুভূমিতে ঘুরিয়াছি, বনে প্রবেশ করিয়াছি, পর্বতে উঠিয়াছিস, চক্ষু হইতে সরিয়া যাইতে কত চক্রই খেলিয়াছিস্, সরিতে পারিস নাই, হানিফার চক্ষে ধূলি দিয়া চক্ষের অন্তরাল হইতে সাধ্য নাই। এখন নিকটে বন জঙ্গল নাই যে, অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়া বঁচিয়া যাইবি। তুই নিশ্চয়ই জানিস, এই রঞ্জিত অসি তোর পরিশুদ্ধ হৃদয়ের বিকৃত রক্তধারায় আবার রঞ্জিত হইবে। সূর্যরাগে মিশাইয়া উদয়-অস্ত একত্র দেখিব। তুই যাবি কোথা? তোর মত মহাপাপীর স্থান কোথা?”
অশ্বারোহী যদি বাগডোর জোরে না রাখে, ঘোড়ার ইচ্ছানুযায়ী গতিতে যদি বাধা না দেয়, তবে অশ্বমাত্রই আপন বাসস্থানে ছুটিয়া আসিতে চেষ্টা করে। এজিদ নিরাশ হইয়া হস্তস্থিত অশ্ববল্পা ছাড়িয়া দিয়াছেন। কোথায় যাইবেন, কি করিবেন, কোন্ পথে কোথায় গেলে পশ্চাদ্ধাবিত যমের হস্ত হইতে রক্ষা পাইবেন, স্থির করিতে না পারিয়াই তিনি তুরঙ্গ-গতিস্রোতে অঙ্গ ভাসাইয়া দিয়াছেন। রাজ-অশ্ব রাজধানী অভিমুখে ছুটিয়াছে। দামেস্ক এজিদের রাজ্য। পথ ঘাট সকলই পরিচিত। রাজধানী অভিমুখে অশ্বের