পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮৯
এজিদ বধ পবর্ব-চতুর্থ প্রবাহ

গতি দেখিয়া তাহার হৃদয়ে নূতন একটি আশার সঞ্চার হইল—রাজপুরী মধ্যে যাইতে পারিলেই রক্ষা, মনের ব্যগ্রতায় এবং প্রাণের মায়ায় আকুল হইয়া দুই হস্তে তিনি অশ্বে কশাঘাত করিতে লাগিলেন—রাজপুরী মধ্যে প্রবেশ করিতে পারিলেই যেন প্রাণ বাঁচাইতে পারেন এই ভাবে। মুগল অশ্ব বেগে দৌড়িতে থাকুক, এই অবসরে এজিদের নূতন কথাটা ভাঙ্গিয়া বলি।

 হজরত মাবিয়ার লোকান্তর গমনের পর এজিদ মারওয়ানের মন্ত্রণায় দামেস্কপুরী-সংলগ্ন উদ্যানমধ্যে ভূগর্ভে এক সুন্দর পুরী নির্মাণ করিয়াছিলেন। ঐ গুপ্তপুরীর প্রবেশদ্বারও এমন সুন্দর কৌশলে নির্মিত হইয়াছিল যে, ইহাকে উদ্যানলতার নিকুঞ্জ ভিন্ন, দ্বার বলিয়া কেহই নির্ধারণ করিতে পারিত না। ঐ পুরী, যে সময়ের অপেক্ষায় আছে আজ সেই সময় উপস্থিত। এজিদের প্রিয় পরিজন, আত্মীয়-স্বজন প্রাণ ভয়ে সকলেই ঐ গুপ্তপুরীর মধ্যে আশ্রয় লইয়াছিলেন। তাহার প্রমাণও পূর্বে পাওয়া গিয়াছে। যেখানকার যে জিনিষ, সেইখানেই পড়িয়া আছে, অথচ জনপ্রাণী মাত্র নাই। কোথায় যাইবে। শত্রু-সেনাপরিবেষ্টিত পুরীমধ্য হইতে কোথায় পলাইবে? ঐ গুপ্তপুরীই প্রাণরক্ষার উপযুক্ত স্থান। এক্তিদের মনেও সেই আশা। তাঁহার সে নীরস হৃদয়ক্ষেত্রে এই একমাত্র আশা-বীজের নব অঙ্কুর। পুরীর কথা মনে পড়িতেই পরিবার-পরিজনের কথা মনে হইয়াছে। তিনি কিঞ্চিৎ আশ্বস্তও হইয়াছেন। রাজপুরী হস্তগত হইলেও পরিবার-পরিজন কখনই পরহস্তগত হইবে -দামেস্কপুরী তন্ন তন্ন করিলেও তাহাদের বিষাদিত কায়া চক্ষে পড়া দূরে থাকুক, ছায়া পর্যন্তও নজরে আসিবে না। এখন উদ্যান পর্যন্ত যাইতে পারিলেই আর পায় কে? লতা-পুষ্পজড়িত কুঞ্জ পর্যন্ত যাইতে পারিলেই হানিফা দেখিবেন যে, এজিদ লতাপাতায় মিশিয়া গেল, পরমাণু আকারের পূষ্পরেণুর সহিত মিশিয়া পুষ্পদলে দেহ ঢাকিয়া ফেলিল। যাহাই হউক, উদ্যান পর্যন্ত যাইতে পারিলেই এজিদের জয়। নগরও নিকটবর্তী। এজিদ জন্মের মত দামেস্ক নগরের পতন-দৃশ্য দেখিয়া চলিলেন। দেখিতে দেখিতে নগরের সুরঞ্জিত সিংহদ্বারে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। দ্বার অমিত—প্রহরি-বজ্জিত। মৃতদেহে রাজপথ পরিপূর্ণ। শবাহারী,