পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৯০

পশুপক্ষিগণ মহা আনন্দিত। চক্ষের পলকে প্রবেশ দ্বার পার হইয়া তিনি নগরে প্রবেশ করিলেন। রাজপুরী চক্ষে পড়িতেই দেখিলেন: উচ্চ উচ্চ মঞ্চে নানা আকারে নূতন পতাকাসকল নগর লোহিত আভায় মিশিয়া অর্ধচন্দ্র এবং পূর্ণতারা প্রত্যক্ষভাবে দেখাইয়া দামেস্কের পতন-দৃশ্য দর্শকগণকে দেখাইতেছে। বিজয়-বাজনা তুমুল বেগে কর্ণে আসিতেছে!-ক্রমেই তিনি নিকটবর্তী হইলেন, রাজপুরী অতি নিকটে। বন্দীগৃহ দূর হইলেও দৃষ্টির অদূর নহে। বন্দীগৃহ চক্ষে পড়িল। এজিদের চক্ষে দামেস্কের বন্দীগৃহ পড়িতেই তাঁহার মন যেন কেমন করিয়া চমকিয়া উঠিল। এমন সঙ্কট সময়েও এজিদের মন যেন কেমন করিয়া উঠিল। যে রূপ হৃদয়ের নিভৃত স্থানে লুকাইয়া ছিল, সরিয়া আসিল।—কিন্তু বেশীক্ষণ রহিল না। চিত্তক্ষেত্র হইতে সে রূপরাশি একেবারে সরিয়া গেল। নামটি মনে উঠিল, কিন্তু মুখে ফুটিল না। দীর্ঘনিশ্বাসও বহিল না। প্রমাণ হইল, প্রমোেদ অপেক্ষা প্রাণের দায়ই সমধিক প্রল। এই সামান্য অন্যমনস্কতায় এজিদের অশ্বগতি কিঞ্চিৎ শিথিল হইল।

 মোহাম্মদ হানিফা এই অবসরে ঐ পরিমাণ স্থান অগ্রসর হইয়া গভীর গর্জনে বলিতে লাগিলেন, “এজিদ। মনে করিয়াছি যে, পুরীমধ্যে প্রবেশ করিলেই আজিকার মত বাঁচিয়া যাইবি? তাহা কখনই মনে করি না। এই সন্ধ্যাপ্রদীপ জুলিতে জুলিতে তোর জীবন-প্রদীপও নির্বাণ হইবে। তোর পক্ষে দামেস্ক-রাজপুরী এইক্ষণে সাক্ষাৎ যমপুরী। কি আশায় সেদিকে দৌড়িয়াছিস্? দেখিতেছি না? উচ্চ মঞ্চে কাহার নিশান উড়িতেছে, দেখিতেছিস না? রে নরাধম। তুই সেই এজিদ, যে আরবের সর্ব প্রধান বীর হাসানকে কৌশল করিয়া মারিয়াছিস? কি সেই পামর, যে সীমার দ্বারা হোসেনের মস্তক কাটাইয়া লক্ষ টাকা পুরস্কার দিয়াছিল?

 মোহাম্মদ হানিফা ক্রোধে অধীর হইয়া অশ্বে কষাঘাত করিলেন। দ্রুতগতি অশপদ-শব্দে পুৱজনগণ চমকিয়া উঠিলেন। বিজয়-বাজনা, আরোল, জয়ধ্বনির কোলাহল ভেদ করিয়া অপদশব্দ মহাশব্দে