পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯১
এজিদ বধ পর্ব্ব—চতুর্থ প্রবাহ

সকলের কর্ণে প্রবেশ করিল। যিনি যে অবস্থায় ছিলেন, শশব্যস্ত হইয়া ঊর্দ্ধশ্বাসে সিংহদ্বার দিকে ছুটিলেন। এজিদ অশ্ব হইতে প্রথমে উদ্যান, শেষে পুষ্পলতাসজ্জিত নিকুঞ্জ দেখিয়া একটু আশ্বস্ত হইলেন।

 মস্‌হাব কাক্কা প্রভৃতি মহারথিগণ, কেহ অশ্বে, কেহ পদব্রজে দ্রুতবেগে অসি-হস্তে আসিতেই হানিফা উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিলেন, “ভ্রাতাগণ! ক্ষান্ত হও! দোহাই তোমাদের ঈশ্বরের— ক্ষান্ত হও! এজিদ তোমাদের বধ্য নহে। বাধা দিও না! এজিদের গমনে বাধা দিও না। এজিদের প্রতি অস্ত্র নিক্ষেপ করিও না।”

 মোহাম্মদ হানিফার কথা শেষ হইতে না হইতে এজিদ এক লম্ফে অশ্ব হইতে নামিয়া উদ্যান অভিমুখে চলিলেন! হানিফাও ত্রস্তভাবে দুল্‌দুলের পৃষ্ঠ হইতে অবতরণ করিয়া অসিহস্তে এজিদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ দৌড়াইলেন। এজিদ যথাসাধ্য দৌড়িয়া উদ্যানস্থ নির্দ্দিষ্ট নিকুঞ্জ মধ্যে যাইয়া ফিরিয়া তাকাইতেই দেখিলেন, মোহাম্মদ হানিফাও অতি নিকটে—বিকৃত ও ভগ্নস্বরে বলিলেন, “হানিফা ক্ষান্ত হও! আর কেন? তোমার আশা, তোমার প্রতিজ্ঞা, তোমার মুখেই রহিল, এজিদ চলিল।” এই কথা বলয়াই এজিদ গুপ্তপুরীর প্রবেশদ্বার কূপমধ্যে প্রবেশ করিলেন।

 মোহাম্মদ হানিফা রোষে অধীর হইয়া——“যাবি কোথা নরাধম” এই কথা বলিয়া, বীর-বিক্রমে হুঙ্কার ছাড়িয়া অসি-হস্তে কূপ মধ্যে লম্প দিবার উপক্রম করিতেই বজ্রনাদে শব্দ হইল, “হানিফা! এজিদ তোমার বধ্য নহে।” মোহাম্মদ হানিফা থতমত খাইয়া ঊর্দ্ধদিকে চাহিতেই প্রভু হোসেনের তোজোময় ছায়া দেখিয়া চম্‌কিয়া উঠিয়া পিছনে হটিলেন এবং ভয়ে চক্ষু বন্ধু করিলেন।

 পুনরায় গভীর নিনাদে শব্দ হইল, “হানিফা ক্ষান্ত হও, এজিদ তোমার বধ্য নহে।”

 মোহাম্মদ হানিফা পুনরায় চক্ষু মেলিয়া তাকাতেই দেখিলেন, মহাঅগ্নিময় মহাতেজ অসংখ্য শিখা বিস্তারে সহস্র অশনিপাত সদৃশ বিকট শব্দ করিয়া নিকুঞ্জ মধ্যস্থ কূপমধ্যে মহাবেগে প্রবেশ করিল। এজিদের