পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৯৬

 শব্দ তাঁহার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিয়াই হউক, কয়েক বার ঐ প্রাচীর প্রদক্ষিণ করিয়া প্রাচীরের নিকট মাথা নোয়াইয়া কর্ণ পাতিয়া শুনিতে লাগিলেন: প্রাচীর-মধ্যে যেন ঘোড়ার পদশব্দ! মস্‌হাব কাক্কা প্রভৃতিও সে শব্দ শুনিতে পাইলেন।

 পাঠক! সে প্রাচীর এক্ষণে পর্ব্বতে পরিণত। ঐ পর্ব্বতের নিকট কান পাতিয়া শুনিলে আজও পর্য্যন্ত ঘোড়ার পায়ের শব্দ শুনা যায়।

 রোজ-কেরামত পর্য্যন্ত মোহাম্মদ হানিফা ঐ প্রাচীর-মধ্যে অশ্ব সহ আবদ্ধ থাকিবেন! দৈববাণী অলঙ্ঘনীয়! “যাহা অদৃষ্টে ছিল হইল। যাহা দয়াময়ের ইচ্ছা ছিল, সম্পূর্ণ হইল। আর বৃথা এ প্রান্তরে থাকিয়া লাভ কি?”— গাজী রহ্‌মান এই কথা বলিয়া নগরাভিমুখী হইলেন। সঙ্গীরাও তাঁহার পশ্চাৎবর্ত্তী হইলেন।

 অন্ধকার আবরণে জগৎ অন্ধকার হইয়া আসিতে লাগিল। এ মহা মহাকাব্য “বিষাদ-সিন্ধুর” ইতিও এইখানে হইল। সিন্ধুপার হইয়াও হইতে পারিলাম না—আশা মিটিল না। পূর্ণ সুখ জগতে নাই। কাহারও ভাগ্যফলকে যোল আনা সুখভোগের কথা লেখা নাই। সুতরাং বিষাদ-সিন্ধু পার হইয়া সুখ-সিন্ধুতে মিশিতে পারিলাম না।

 জয়নাল আবেদীন পৈতৃকরাজ্য উদ্ধার করিয়া সিংহাসনে বসিয়াছেন—পরিবার-পরিজনকে বন্দীখানা হইতে উদ্ধার করিয়া বিশেষ আদর সম্মানের সহিত রাজভবনে আনিয়াছেন। মদিনা, দামেস্ক—উভয় রাজ্যই এখন তাঁহার করতলে; উভয় সিংহাসনই এখন জয়নাল আবেদীনের বসিবার আসন। পরম শত্রু-পৈতৃক শত্রু এজিদের সর্ব্বস্ব গিয়াছে; ধনজন-রাজ্যপাট সকলই গিয়াছে। যদিও প্রাণ যায় নাই, কিন্তু দৈবাগ্নিতে দগ্ধ হওয়া ব্যতীত কূপ-মধ্যে এজিদ-দেহের অন্য কোন ক্রিয়া নাই। সেই দেহ মনুষ্যেরও আর দেখিবার সাধ্য নাই! সুতরাং সাধারণ চক্ষে এজিদবধই সাব্যস্ত করিতে হইবে। সুখের একশেষ! আরও অধিক সুখের কথা হইত, যদি মোহাম্মদ হানিফা দৈবনির্ব্বন্ধে প্রস্তর-প্রাচীরে চির আবদ্ধ না হইতেন। হায়! আক্ষেপ-শত আক্ষেপ! সিন্ধু পার হইয়াও হইতে