পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫
মহরম পর্ব্ব—ষষ্ঠ প্রবাহ

ওরে বিধর্ম্মী এজিদ! তোর পিতা যাঁহাদের দাসানুদাস, তুই কোন্ মুখে তাঁহাদের প্রতি এমন অকথ্য কথা বলিলি? তোর নিস্তার কোন লোকেই নাই;—ইহলোকেও নাই, পরলোকেও নাই। তুই জানিস, এ রাজ্য তোর পিতার নহে। সেই হাসানের পিতা আলী অনুগ্রহ করিয়া—ভৃতের কার্য্যে সন্তুষ্ট হইয়া প্রভু যেমন কিছু দান করেন, সেইরূপ তোর পিতাকে কেবলমাত্র ভোগের জন্য এই রাজ্য দান করিয়া গিয়াছেন। বল্ ত, কোন্ মুখে এমন কর্কশ শব্দ তাঁহাদের প্রতি ব্যবহার করিলি? আমার সম্মুখ হইতে দূর হ! তোর ও-পাপ মুখ আমি আর এ চক্ষে দেখিব না! আর দেখিব না। তুই দূর হ।”

 এজিদ ম্লান মুখে উঠিয়া চলিয়া গেলেন। এজিদের মাতা নানা প্রকার সান্ত্বনা দিয়া মাবিয়াকে বুঝাইতে লাগিলেন, “আপনি স্থির হউন! ইহাতে আপনার পীড়ায় বৃদ্ধি হইবে। আপনি যত বেশী উত্তেজিত হইবেন, ততই আপনার পীড়া বৃদ্ধি হইবে।”

 মাবিয়া বলিলেন, “পীড়াই বৃদ্ধি হউক, আর আমার প্রাণ বাহির হইয়াই যাউক, যে কথা আমি আজ শুনিয়াছি, তিলার্দ্ধ কাল বাঁচিতে আমার আর ইচ্ছা নাই!” সজোরে একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া মাবিয়া দুই হস্ত তুলিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিতে লাগিলেন, হে দয়াময়। হে করুণাময়! তুমি সর্ব্বশক্তিমান! আমাকে উদ্ধার কর। আমি যেন এজিদের পাপমুখ আর না দেখি। এজিদের কথাও যেন কর্ণে না শুনি। এজিদ আজ আমার অন্তরে যে আঘাত দিয়াছে, আর ক্ষণকাল বাঁচিতেও আমার ইচ্ছা নাই। শীঘ্র আমাকে এই পাপপুরী হইতে উদ্ধার করিয়া লও। হজরত মাবিয়া এই প্রকার কাতর উক্তিতে ঈশ্বরের উপাসনা করিয়া ব্যাধিশয্যায় শয়ন করিলেন।