পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০১
উপসংহার

অমনি অচেতন। তাহার পর জনকোলাহলে হঠাৎ জাগিয়া কি করিবেন, কি শুনিবেন, কোথায় যাইবেন, কি অপকর্ম্ম করিয়াছি, ক্ষণস্থায়ী অনুতাপ সহ্য করিয়া চতুর্দ্দিক চাহিয়া গত কথাসকল ক্রমে স্মরণপথে আনিয়া তাঁহারা মহাব্যস্তে মনোমত স্থানে যাইয়া উপবেশন করিলেন।—একদৃষ্টে রাজপথপরিশোভা, সজ্জিত গৃহশ্রেণীর নয়নরঞ্জন মনোহর শোভা দেখিতে দেখিতে নিদ্রাবশের অলসতা দূর করিলেন।

 নগরবাসিগণ নব-সাজে সজ্জিত হইয়া দলে দলে নগরের প্রান্তসীমা সিংহদ্বার পর্য্যন্ত যাইয়া বিজয়ী আত্মীয়-স্বজনকে সম্বর্দ্ধনা করিয়া আনিতে উৎসুক-নয়নে দণ্ডায়মান রহিয়াছেন।

 সময় হইল। প্রথম পদাতিকশ্রেণী বিজয় নিশানসহ দেখা দিল,— তৎপশ্চাৎ শস্ত্রধারী যোদ্ধাসকল শ্রেণীবদ্ধরূপে সিংহদ্বার পার হইল। তৎপরে উষ্ট্রোপরি নকীবদল বাঁশরী বাজাইয়া নব-ভূপতির জয় ঘোষণার সহিত আগমন ঘোষণা অতি সুমিষ্ট সুরে নাকাড়া বাজাইতে বাজাইতে জানাইয়া দিল। তৎপরে নানারূপ বস্ত্রাভরণে সজ্জিত বীরকেশরীগণ অলঙ্কৃত অশ্বোপরি আরোহণ করিয়া হাসি হাসি মুখে নগরে প্রবেশ করিলেন।— তৎপরে রাজ-আত্মীয় মহা মহা বীরবৃন্দ রত্নখচিত জরির সাজে সজ্জিত হইয়া বৃহদাকার সজ্জিত অশ্বে আরোহণ ও ভীমকায় রক্ষিদলে পরিবেষ্টিত হইয়া প্রবেশ করিলেন। তাহার পর সুবর্ণ ও রজতদণ্ডে স্থাপিত কারুকার্য্যখচিত অর্দ্ধচন্দ্র ও পূর্ণতারকাসংযুক্ত বহুসংখ্যক নিশানধারী অশ্বরোহীদল পশ্চাতে—সুবর্ণদণ্ডে স্থাপিত কারুকার্য্যখচিত শুভ্র চন্দ্রাতপ শিক্ষিত উষ্ট্রোপরি স্থাপিত হইয়া আতপতাপ নিবারণ করিতেছে এবং ঐ চন্দ্রাতপ নিম্নে মক্কা-মদিনার রাজা, মুসলমান জগতের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ, ধর্ম্মজগতের সর্ব্ব প্রধান ভূপতি, হজরত মোহাম্মদ মোস্তফার বংশধর মহামহিমান্বিত মহারাজাধিরাজ জয়নাল আবেদীন, নিষ্কোষিত অস্ত্রে সজ্জিত, সহস্র অশ্বারোহী-রক্ষী-পরিবেষ্টিত হইয়া বীরসাজে অশ্বারোহণে মৃদুমন্দ পদবিক্ষেপে সিংহদ্বার পার হইয়া নগরে প্রবেশ করিলেন। অমনি দর্শকশ্রেণীমুখে—“জয়নাল আবেদীনের জয়! মদিনার সিংহাসনের জয়! জয় নব ভূপতির জয়!” এইরূপ রব তুমুল আকারে