“কাহিনীর দেশ ইরাণ (ফারেস্তান্)। সে দেশের সাহিত্যিকরা ‘জংনামা’ ‘মোক্তল-হোসেন’ প্রভৃতি সত্য-মিথ্যায় রঞ্জিত কাহিনীর কেতাবগুলি প্রচার করিয়াছিলেন কেন, সে কার্য্যে তাঁহাদের সার্থকতাই বা কি ছিল, ঐ সকল কাহিনীর কেতাবগুলির লেখকরাই বা কোন্ সম্প্রদায়ভুক্ত মোসলমান ছিলেন, —সে কথাগুলির আলোচনাও আমাদিগকে করিতে হইবে।
পাঠক-পাঠিকারা অবগত আছেন যে, ইরাণ (ফারাস্তান্) তুরাণ, মাদায়েন প্রভৃতি পারস্যের প্রায় সর্ব্বত্রই সুন্নি ও শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত মোসলমানরা বাস করেন এবং তাঁহারা মনে করেন —সুন্নি সম্প্রদায়ভুক্ত মোসলমানদিগের সম্বন্ধ সাধারণতঃ মক্কা, মদীনা, বয়তুল্ মোকাদ্দস্ প্রভৃতি স্থানের সুন্নি মোসলমানদিগের সহিত, আর শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত মোসলমানদিগের সম্বন্ধ, সাধারণতঃ এরাক, কুফা, কারবালা, মেশের প্রভৃতি স্থানের শিয়া মোসলমানদিগের সহিত।
যে-সময় কারবালার সেই দুর্নীতিপূর্ণ অত্যাচারমূলক তুলনাবিহীন যুদ্ধাভিনয়ে হজরত হোসেন প্রায় সবংশে লাঞ্ছিত ও নিহত হইয়াছিলেন, সে সময় এজিদ-পক্ষে যাহারা সেনা ও সেনাপতিরূপে কারবালার সমরাভিনয় করিয়াছিল, তাহারা সকলেই ছিল এরক-কুফার অধিবাসী। তাহারা পরিচয় দিত আমরা হজরত আলী, হজরত হোসায়ান ও হজরত হাসানের ভক্ত শিয়া।”
অতএব লেখকের বর্ণনামতে এ কথা স্পষ্টই প্রতীয়মান হইতেছে যে, বিষাদ-সিন্ধুর বর্ণিত ঘটনার উপর সম্প্রদায়গত কলহের ছাপ বিদ্যমান রহিয়াছে। মরহুম মীর মোশার্রফ হোসেন সাহেবের “বিষাদ-সিন্ধু”—প্রধাণতঃ “জংনামা” বা “মোক্তল হোসায়ন” শ্রেণীর গ্রন্থাবলী অবলম্বনে রচিত।
তাই ডাঃ সাহেবের এই পরিশিষ্ট—বিষাদ-সিন্ধুর জন্য অপরিহার্য্য ছিল বলিতে হইবে। যে কোন গ্রন্থই তার মূল ঐতিহাসিক ভিত্তির উপর দাঁড়াইলে যে, তাহার সৌন্দর্য্য আরও কতগুণ বর্দ্ধিত হইতে পারে— “বিষাদ-সিন্ধুর পরিশিষ্ট” উহারই এক উৎকৃষ্ট নিদর্শন।