পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৮

তাঁহাকে বেশী আদর ও বেশী যত্ন করেন, জাএদার মনে এইটিই বদ্ধমুল হইল। প্রকাশ্যে কোন বিষয়ে বেশী ভালবাসার চিহ্ন জাএদা কখনও দেখিতে পান নাই, তথাপি তাঁহার মনের সন্দেহ ঘুচিল না। তিনি কোন দিন তাঁহার প্রতি যত্নের ত্রুটি, কি কোন বিষয়ে ক্ষতি, কি অণুমাত্রও ভালবাসার লাঘব দেখিলেন না। তথাপি জয়নাব তাঁহার পরম শত্রু, চক্ষের শূল, সুখ-পথের প্রধান কণ্টক।

 এমাম হাসান ধর্ম্মশাস্ত্রের অকাট্য বিধি উল্লঙ্ঘন করিয়া জয়নাবকে বিবাহ করেন নাই। ইচ্ছা হইলে এখনও চতুর্থ সংখ্যা পূর্ণ করিতে পারেন। ভালবাসার ন্যূনাধিক্যে তাঁহার কোন স্ত্রী তাঁহাকে কোন নিন্দা করিতে পারেন না। তবে জাএদা এত বিষাদিনী হইলেন কেন? কেন জয়নাবকে বিষদৃষ্টিতে দেখিতে লাগিলেন? বাধ হয়, জাএদা ভাবিতেন যে, একটি স্ত্রীর তিনটি স্বামী হইলে সে স্ত্রীলোকটি যে প্রকার সুখী হয়, তিনটি স্ত্রীর এক স্বামীও বোধ হয় সেই প্রকার সুখভোগ করে। কিন্তু সেই স্বামীত্রয়ের মধ্যে যদি কোন বিষয়ে অসুবিধা, কি কোন কারণে হিংসা, দ্বেষ, ঈর্ষার প্রাদুর্ভাব হইয়া আত্মকলহ উপস্থিত হয় এবং একের অনিষ্ট-চিন্তায় দ্বিতীয় যত্নবান হয়, তৃতীয় কাহারও স্বপক্ষে, কি উভয়কে শত্রু মনে করিয়া শত্রুবিনাশে একেবারে কৃতসঙ্কল্প হয়, তবে আমারই বা না হইবে কেন? আমিও ত শরীরী, আমারও ক্ষুধা আছে, তৃষ্ণা আছে, মাংসপেশী, ধমনী, হৃদয়, শোণিত, অস্থি, চর্ম্ম ও ইচ্ছা—সকলই আছে, তবে মনোভাবের বিপর্য্যয় হইবে কেন? এক উপকরণে গঠিত শরীরে স্বাভাবিক নিয়মের লঙ্ঘন অথবা ভিন্ন ভাব হওয়া অসম্ভব। জগতে শত্রু তিন প্রকার;—প্রথম প্রকৃত শত্রু, দ্বিতীয় শত্রুর বন্ধু, তৃতীয় মিত্রের শত্রু। এই সূত্র-অনুসারে মৈত্রীবন্ধন হইতে হাসান যেন অল্পে অল্পে সরিতে লাগিলেন।

 স্বামীর নিরপেক্ষ ভালবাসা জাএদা আর ভালবাসিলেন না। মনের কথা মনেই থাকিল। কোন দিন কোন প্রকারে, কি কোন কথায়, কি কোন কথার প্রসঙ্গেও সে কথা মুখে আনা দূরে থাকুক, কণ্ঠে পর্য্যন্তও আনিলেন না। স্ত্রীলোকমাত্রই স্বভাবতঃ কিছু চাপা। ভাষায় কাজ কর্ম্মে যেমন ভারী, পরিমাণেও তদপেক্ষা দ্বিগুণ ভারী; সহজে উঠাইতে