পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১
মহরম পর্ব্ব—অষ্টম প্রবাহ

সাব্যস্ত করিলেন যে, এ ফকির আর কেহই নয়, এ সেই আবদুল জব্বার। একে একে আবদুল জব্বারের অবয়ব, ভাব-ভঙ্গী, কথার স্বরে নিশ্চয়ই প্রমাণিত হইল যে,—আর কেহই নয়, এ সেই আবদুল জব্বার। কি আশ্চর্য্য। মানুষের অবস্থা কখন কিরূপ হয়, কিছুই জানিতে পারা যায় না। হজরত মাবিয়ার কথা যেরূপ শুনিলাম, ইহাতে তাঁহার জীবনাশা নাই বলিয়াই বোধ হয়। যাহা হউক, হোসেনের সহিত পরামর্শ করিয়া যাহা করিতে হয় করিব; এই বলিয়া তৎক্ষণাৎ নিজ গৃহাভিমুখে চলিয়া গেলেন।

অষ্টম প্রবাহ

 মাবিয়া পীড়িত। এক্ষণে নিজবশে আর উঠিবার শক্তি তাঁহার নাই। তিনি প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, এজিদের মুখ দেখিবেন না। দামেস্বরাজ্য যাঁহাদের পৈতৃক রাজ্য, তাঁহাদিগকে দিয়া যাইবেন, মনে মনে স্থির করিয়া হাসানহোসেনকে আনিবার জন্য তিনি কাসেদ পাঠাইয়াছিলেন। তাঁহারা এ পর্য্যন্ত আসিতেছেন না, সে জন্য তিনি মহাব্যস্ত ও চিন্তিত। সেই কাসেদের অদৃষ্টে যাহা ঘটিয়াছে, তাহা এ পর্য্যন্ত তিনি কিছুই জানিতে পারেন নাই। তিনি প্রধান উজীর হামানকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “হাসান-হোসেনের এত দিন না আসিবার কারণ কি?”

 হামান্ উত্তর করিলেন, “কাসেদ যদি নির্ব্বিঘ্নে মদিনায় যাইয়া থাকে, তবে হাসান-হোসেনের না আসিবার কারণ আমার বুদ্ধিতে আসিতেছে না। আপনার পীড়ার সংবাদ পাইয়া তাঁহারা যে নিশ্চিন্তভাবে রহিয়াছেন, ইহা কখনই বিশ্বস্ত নহে। আমার নিশ্চয় বোধ হইতেছে, কাসেদের কোন অমঙ্গল ঘটিয়া থাকিবে।”

 এজিদ সেই রাত্রি হইতে আর মাবিয়ার সম্মুখে যাইতেন না, গুপ্তভাবে অর্থাৎ মাবিয়ার দৃষ্টির অগোচরে কোনস্থানে প্রচ্ছন্ন থাকিয়া তাঁহার প্রতিও বিশেষ লক্ষ্য রাখিতেন। মাবিয়া হামানের সঙ্গে যে কথা কহিতেছেন, তাহাও তিনি তাঁহার নির্দ্দিষ্ট স্থানে থাকিয়া সমুদয় শুনিতেছেন। মাবিয়া ক্ষণকাল পরে