পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৩
মহরম পর্ব্ব—অষ্টম প্রবাহ

কেনই বা আমার গমনে বাধা দিতেছ?” তাহাদের মধ্য হইতে এক জন গম্ভীরস্বরে বলিতে লাগিল, “মোস্‌লেম! তোমার সৌভাগ্য যে, আজ তুমি কাসেদ-পদে বরিত হইয়াছ। তাহা না হইলে জিজ্ঞাসা করার অবসর পাইতে না,—“তোমরা কে?” এ কথা উচ্চারিত হইবার পূর্ব্বেই তোমার শির বালুকায় গড়াগড়ি যাইত, দেহটিও দিব্যি লোহিত রঙে রঞ্জিত হইয়া ধরাশায়ী হইত; পরিশ্রম করিয়া আর হাঁটিয়া কষ্ট করিতে হইত না। যাহা হউক, যদি কিছু দিন জগতের মুখ দেখিতে চাও, তবে আর এক পদও অগ্রসর হইও না।”

 “কেন হইব না; আমি রাজ-কাসেদ, হজরত মাবিয়ার পীড়ার সংবাদ লইয়া মদিনা শরীফে এমাম হাসান-হোসেনের নিকট যাইতেছি, কাহার সাধ্য আমার গতিরোধ করে?”—এই বলিয়া মোস্‌লেম যাইতে অগ্রসর হইলেন। তাহারাও বাধা দিতে লাগিল। মোস্‌লেম অসি নিষ্কোষিত করিয়া বলিলেন, “কার সাধ্য? কে মোস্‌লেমের পথরোধ করে। গমনে কে বাধা দেয়?” এই বলিয়া মোস্‌লেম চলিলেন। এত দ্রুতবেগে মোস্‌লেমের তরবারি সঞ্চালিত হইতে লাগিল যে, পরিষ্কৃত অসির চাকচিক্যে সকলের চক্ষে ধাঁধা লাগিয়া গেল, এক পদও আর মোস্‌লেমের দিকে কেহ অগ্রসর হইতে পারিল না। উহার মধ্য হইতে এক জন হঠাৎ মুখের বস্ত্র খুলিয়া বলিতে লাগিল, “মোস্‌লেম, তোমার চক্ষু কোথায়?” মোস্‌লেমের চক্ষু যেমন তাহার মুখের প্রতি পড়িল, অমনি তিনি তরবারি হস্ত হইতে নিক্ষেপ করিয়া অভিবাদনপূর্ব্বক করজোড়ে দণ্ডায়মান রহিলেন। এজিদের আদেশে সঙ্গীরা মোস্‌লেমের অঙ্গ হইতে অস্ত্র-শস্ত্র কাড়িয়া লইল। মাবিয়ার পত্রখানি এজিদ স্বহস্তে খণ্ড খণ্ড করিয়া ছিঁড়িয়া ফেলিলেন, বলিলেন, “যত দিন মাবিয়ার মৃত্যু না হয়, তত দিন তোমাকে বন্দী অবস্থায় নির্জ্জন কারাবাসে থাকিতে হইবে। তুমি ত বড় ঈশ্বরভক্ত, মাবিয়ার মৃত্যু-কামনাই তোমার আজ হইতে প্রার্থনার এক প্রধান অঙ্গ করিয়া দিলাম। যাও, ঐ লৌহশৃঙ্খল পরিয়া অনুচরদিগের সহিত মহানন্দে নাচিতে নাচিতে যেখানে উহারা লইয়া যায়, সেইখানে গমন কর।”

 মোস্‌লেম কিছুই বলিলেন না, দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া যেন কাষ্ঠ-