পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৪

পুত্তলিকার ন্যায় এজিদের সম্মুখে দাঁড়াইয়া রহিলেন। অনুচরেরা লৌহশৃঙ্খলে মোস্‌লেমের হস্তপদ বন্ধন করিল, শেষে গলদেশে শিক বঁধিয়া লইয়া চলিল— হায় রে স্বার্থ!

 এজিদ বংশীবাদন করিয়া সঙ্কেত করিবামাত্র একটি বৃহৎ বালুকাস্তুপের পার্শ্ব হইতে এক ব্যক্তি অশ্ব লইয়া উপস্থিত হইল। এজিদ অশ্বারোহণে নগরাভিমুখে চলিয়া আসিলেন। চারি জন প্রহরী মোস্‌লেমকে বন্দী করিয়া ঘিরিয়া লইয়া চলিল।

নবম প্রবাহ

 দামেস্ক-রাজপুরীমধ্যে পুরবাসিগণ, দাসদাসীগণ মহা ব্যতিব্যস্ত। সকলেই বিষাদিত। মাবিয়ার জীবন সঙ্কটাপন্ন—বাক্‌রোধ হইয়াছে, চক্ষুতারা বিবর্ণ হইয়া ঊর্দ্ধে উঠিয়াছে, কথা কহিবার শক্তি নাই: এজিদের জননী নিকটে বসিয়া স্বামীর মুখে সরবত দিতেছেন, দাসদাসীগণ দাঁড়াইয়া কঁদিতেছে, আত্মীয়স্বজনেরা মাবিয়ার দেহ বেষ্টন করিয়া একটু উচ্চস্বরে ঈশ্বরের নাম করিতেছেন। হঠাৎ মাবিয়া একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া “লা—এলাহা ইল্লাল্লাহ মোহাম্মদর রসুলাল্লাহ্” এই শব্দ করিয়া উঠিলেন। সকলে গোলযোগ করিয়া ঈশ্বরের নাম করিতে করিতে বলিয়া উঠিলেন, “এবার রক্ষা পাইলেন; এবার আল্লাহ্ রেহাই দিলেন।” আবার কিঞ্চিৎ বিলম্বে ঐ কয়েকটি কথা ভক্তির সহিত উচ্চারিত হইল। সেবার আর বিলম্ব হইল না। অমনি আবার ঐ কয়েকটি কথা পূনর্ব্বার উচ্চারণ করিলেন। কেহ আর কিছুই দেখিলেন না। কেবল ওষ্ঠ দুইখানি একটু সঞ্চালিত হইল মাত্র। ঊর্দ্ধ-চক্ষু নীচে নামিল। নামিবার সঙ্গে সঙ্গেই চক্ষের পাতা অতি মৃদু-মৃদুভাবে আসিয়া চক্ষুর তারা ঢাকিয়া ফেলিল। নিশ্বাস বন্ধ হইল; এজিদের জননী মাবিয়ার বক্ষে হস্ত দিয়া স্পর্শ করিয়াই কাঁদিয়া উঠিলেন। সকলেই মাবিয়ার জন্য কাঁদিতে লাগিলেন। এজিদ অশ্ব হইতে নামিয়া তাড়াতাড়ি আসিয়া দেখিলেন: মাবিয়ার চক্ষু নিমীলিত, বক্ষস্থল অস্পন্দ! একবার তাঁহার মস্তকে, একবার বক্ষে হাত