রাজাজ্ঞা! নিয়মিত সময়ে সকলেই “আম” দরবারে উপস্থিত হইলেন। এজিদও উপযুক্ত বেশভূষায় ভূষিত হইয়া সিংহাসনোপরি উপবেশন করিলেন। প্রধান মন্ত্রী মারওয়ান দরবারস্থ সমুদয় সম্ভ্রান্ত মহোদয়গণকে সম্বোধন করিয়া কহিতে লাগিলেন, “আজ আমাদের সুখের দিন, আজ আমরা এই দামেস্কসিংহাসনে নবীন রাজের অধিবেশন দেখিলাম। উপযুক্ত পাত্রেই আজ রাজসিংহাসন সুশোভিত হইয়াছে। সম্ভ্রান্ত মহোদয়গণ! আজ হইতে আপনাদের দুঃখ ঘুচিল। দামেস্ক রাজ্যে আজ হইতে যে সুখ-সূর্য্যের উদয় হইল, তাহা আর অস্তমিত হইবে না। আপনারা এই নবোদিত সূর্য্যকে কায়মনে পুনরায় অভিবাদন করুন!” সভাস্থ সকলেই নতশিরে এজিদকে অভিবাদন করিলেন। মারওয়ান পুনরায় বলিতে লাগিলেন, “মহোদয়গণ! আমার একটি কথা আছে। আজ মহারাজ এজিদ সবেমাত্র রাজদণ্ড হস্তে করিয়াছেন, এবং আজই একটি গুরুতর বিচারভার ইঁহাকে বহন করিতে হইতেছে। আপনাদের সম্মুখেই রাজদ্রোহীর বিচার করিবেন বলিয়া তিনি আপনাদিগকে আহ্বান করিয়াছেন।”
মারওয়ানের পূর্ব্ব আদেশানুসারে প্রহরীরা মোস্লেমকে বন্ধন অবস্থায় রাজসভায় আনিয়া উপস্থিত করিল। সভাস্থ সকলে মোস্লেমের দুরবস্থা দেখিয়া একেবারে বিস্ময়াপন্ন হইলেন। মাবিয়ার এত বিশ্বাসী প্রিয়পাত্র এত সম্মানাস্পদ, এত স্নেহাস্পদ, সেই মোস্লেমের এই দুরবস্থা! কি আশ্চর্য্য! আজিও মাবিয়ার দেহ ভূগর্ভে বিলীন হয় নাই, অনেকেই আজ পর্য্যন্ত শোকবস্ত্র পরিত্যাগ করেন নাই, মাবিয়ার নাম এখনও সকলের জিহ্বাগ্রেই রহিয়াছে, আজ সেই মাবিয়ার প্রিয় বন্ধুর এই দুর্দ্দশা! কি সর্ব্বনাশ! এজিদের অসাধ্য কি আছে? অনেকেই মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন—আর মঙ্গল নাই। দামেস্ক রাজ্যের আর মঙ্গল নাই। কি পাষাণহৃদয়? উঃ!! এজিদ কি পাষাণহৃদয়!! কিন্তু কাহারও মুখ ফুটিয়া কিছুই বলিবার সাহস হইল না; সকলেই কেবল মনে মনে ঈশ্বরের নাম জপ করিতে লাগিলেন। মোস্লেম চিন্তায় ও মনস্তাপে ক্ষীণকায় হইয়াছেন। এজিদ বলিয়াছেন—মাবিয়ার মৃত্যুতেই তাঁহার মুক্তি, কিন্তু মাবিয়া আছেন কি না, মোস্লেম তাহাও স্থির করিতে পারিলেন