পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৭
মহরম পর্ব্ব—নবম প্রবাহ

না। কে কোন কথা তাঁহাকে বলিতে পারিবে না এবং তাঁহার কথাও কেহ জানিতে পারিবে না,—পূর্ব্ব হইতেই এজিদের এই আজ্ঞা ছিল। সুতরাং মোস্‌লেমকে কোন কথা বলে, কাহার সাধ্য?

 নগরের প্রায় সমুদয় ভদ্রলোককে একত্র দেখিয়া মোস্‌লেম কিছু আশ্বস্ত হইলেন। তিনি মনে মনে জানেন: কোন অপরাধে তিনি অপরাধী নহেন। রাজাজ্ঞা প্রতিপালন করিয়াছেন, ইহাতে যদি এজিদ অন্যায়াচরণ করেন, তবে একমাত্র ঈশ্বর ভিন্ন আর কাহাকেও তিনি কিছু বলিবেন না, মুক্তিলাভের প্রার্থনাও করিবেন না। তিনি মাবিয়ার আজ্ঞাক্রমেই হাসান-হোসেনের নিকট মদিনায় যাইতেছিলেন; ইহাই যদি অপরাধের কার্য্য হয়, আর সেই অপরাধেই যদি প্রাণ যায়, তাহাও স্বীকার, তথাপি তিনি চিত্ত বিচলিত করিবেন না। মনে মনে এইরূপ স্থির করিয়া ঈশ্বরের প্রতি নির্ভর করিয়া মোস্‌লেম দাঁড়াইয়া রহিলেন। সভ্যগণকে সম্বোধনপূর্ব্বক মারওয়ান কহিলেন, “এই ব্যক্তি রাজদ্রোহী, আজ ইহারই বিচার হইবে। আমাদের নব দণ্ডধর আপনাদের সম্মুখে ইহার বিচার নিষ্পত্তি করিবেন, ইহাই তঁহার অভিপ্রায়।”

 এজিদ বলিলেন, “এই কাসেম বিশ্বাসী নহে। যাহারা ইহাকে বিশ্বাসী বলিয়া স্থির করিয়াছে, এবং ইহার অনুকূলে যাহারা কিছু বলিবে, তাহারাও বিশ্বাসী নহে। আমার বিবেচনায় ইহার স্বপক্ষের লোকমাত্রেই অবিশ্বাসী, রাজদ্রোহী।”

 সকলের শরীর রোমাঞ্চিত হইল, ভয়ে হৃদয় কাঁপিতে লাগিল, আকণ্ঠ শুকাইয়া গেল। যাঁহারা মোস্‌লেমের সম্বন্ধে কিছু বলিতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন, তাঁহাদের মুখ একেবারে বন্ধ হইয়া গেল।

 এজিদ পুনর্ব্বার বলিতে লাগিলেন: “এই মিথ্যাবাদী বিশ্বাসঘাতক আমার বিবাহ-পয়গাম লইয়া জয়নাবের নিকট গিয়াছিল। আমার পয়গাম গোপন করিয়া আমার চিরশত্রু হাসান,—যাহার নাম শুনিলে আমার দিগবিদিক জ্ঞান থাকে না, সেই হাসানের পয়গাম জয়নাবের নিকট বলিয়া জয়নাবের সহিত তাহার বিবাহ দিয়াছে। আমি নিশ্চয় জানি, আমার পয়গাম জয়নাবের কর্ণগোচর হয় নাই। আমার নাম শুনিলে জয়নাব কখনই হাসানকে ‘কবুল’