পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৫০

যাহা করিব, তাহা মনেই থাকিল। তবে এইমাত্র বলি যে, হাসান-হোসেনের এবং তাঁহাদের বংশানুবংশ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের প্রতি এজিদ যে দৌরাত্ম্য-অগ্নি জ্বালাইয়া দিবে, যদি তাহা কখন নিবিয়া যায়, যাইতে পারে, কিন্তু সে তাপ ‘রোজ-কেয়ামত’ (জগতের শেষ দিন) পর্য্যন্ত মোহম্মদীয়গণের মনে একই ভাবে জাগরিত থাকিবে। আবার যাহারা হাসান-হোসেনের বেশী ভক্ত, তাহার আজন্মকাল ছাতি পিটিয়া[১] ‘হায় হাসান! হায় হোসেন?’ বলিয়া কাঁদিতে থাকিবে।”

 সভ্যগণকে এই সকল কথা বলিয়া এজিদ পুনরায় মারওয়ানকে বলিলেন, “হাসান-হোসেনের নিকট যে পত্র পাঠাইবে, সেই পত্রখানা পাঠ করিয়া ইঁহাদিগকে একবার শুনাইয়া দাও, ইঁহাদিগের মধ্যে মোহাম্মদভক্ত অনেক আছেন।”

 মারওয়ান পত্র পাঠ করিতে লাগিলেন,—

“হাসান! হোসেন!

 তোমরা কি এপর্য্যন্ত শুন নাই যে, মহারাজাধিরাজ এজিদ নামদার মধ্যাহ্নকালীন সূর্য্যসম দামেস্ক সিংহাসনে বিরাজ করিতেছেন? অধীনস্থ রাজা-প্রজামাত্রেই তাঁহার অধীনতা স্বীকার করিয়া কেহ বা উপঢৌকন প্রেরণ, কেহ বা স্বয়ং আসিয়া অবনত শিরে চির-অধীনতা স্বীকার করিয়াছেন, এবং আপন আপন রাজ্যের নির্দ্ধারিত দেয় করে দামেস্ক-রাজভাণ্ডার পূর্ণ করিয়াছেন। তোমাদের মক্কা-মদিনার খাজানা আজ পর্য্যন্ত না আসিবার কারণ কি? স্বয়ং মহারাজাধিরাজ দামেস্কাধিপতির আম-দরবারে উপস্থিত হইয়া নতশিরে ন্যূনতা স্বীকারে সিংহাসন চুম্বন কর। আর এই পত্র প্রাপ্তিমাত্রই এজিদ নামদারেরর নামে খোৎবা[২] পাঠ করিবে। ইহার অন্যথাচরণ করিলেই রাজদ্রোহীর শাস্তি ভোগ করিতে হইবে।

মারওয়ান প্রধান মন্ত্রী”

  1. মহরমের সময়ে শিয়াগণকে অনেকেই বক্ষে করাঘাত করিতে দেখিয়াছেন, তাহাকেই ‘ছাতিপেটা’ কহে।
  2. ঈদলফেতর, ইদুজ্জোহা,—এই দুই ঈদ এবং জুমার নামাজ (উপাসনা) যাহা