পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫১
মহরম পর্ব্ব—দশম প্রবাহ

 পত্র পাঠ শেষ হইল। তখনি উপযুক্ত কাসেদের হস্তে পত্র দিয়া রাজা সভাভঙ্গের আজ্ঞা দিলেন। অনেকেই বিষাদপূর্ণনেত্রে অশ্রুপাত করিতে করিতে সভাগৃহ হইতে বহির্গত হইলেন।


দশম প্রবাহ

 নূরনবী মোহাম্মদের রওজায়[১] অর্থাৎ সমাধি-প্রাঙ্গণে হাসান-হোসেন, সহচর আবদুল্লাহ, ওমর এবং রহমান একত্রে বসিয়া পরামর্শ করিতেছেন। যখন কোন বিপদভার মস্তকে আসিয়া পড়ে, কোনরূপ গুরুতর কার্য্যে হস্তক্ষেপ করিতে হয়, অথবা কোন অভাবনীয় চিন্তা সদ্‌যুক্তি সৎপরামর্শ করিবার


    প্রতি শুক্রবারে দুই প্রহরের পর হইয়া থাকে, ঐ তিন উপাসনার পর আরবী ভাষায় ঈশ্বরের গুণানুবাদের পর উপাসনা বর্ণনা, পরে স্বজাতীয় রাজার নাম উচ্চারণ করিয়া তাঁহার দীর্ঘায়ু ও রাজ্যের স্থায়িত্ব কামনা করা হয়। ভারতীয় মুসলমানগণ পুর্ব্বে দিল্লীর মোগল সম্রাটগণের নামে খোৎবা পাঠ করিতেন।

  1. উক্ত হইয়াছে, হিজরী ১১ সনের ১২ই রবিয়াল আউয়ল সোমবার দিবা ৭ম ঘটিকার সময় ৬৩ বৎসর বয়সে প্রভু মোহাম্মদ পবিত্র ভূমি মদিনায় মানবলীলা সংবরণ করেন। তাঁহার পিতার নাম আবদুল্লাহ্‌, মাতার নাম আমেনা খাতুন। প্রভুর দেহত্যাগের পর কোথায় সমাধি হইবে, এই বিষয়ে অনেক বাদানুবাদ হইলে, হজরত আবুবকর এই মীমাংসা করেন যে, পয়গম্বর সাহেব জীবিতাবস্থায় যে স্থানকে প্রিয় মনে করিতেন, সেই স্থানে সমাধি হওয়া আবশ্যক। সকলে ঐ মতের পোষকতা করায় বিবি আয়েশার ঘরে সমাধি দেওয়া সুস্থির হইল। বিবি আয়েশা হজরত আবুবকরের কন্যা এবং হজরত মোহাম্মদের সহধর্ম্মিণী। মোহাম্মদের সমাধিস্থানকে রওজা কহে। হজরত ওমর প্রথমতঃ কঁচা ইটের দ্বারা রওজা গাঁথুনী করেন। তৎপরে অলিদ চতুঃসীমাবন্দী করিয়া নক্সাদার প্রস্তর দ্বারা উহা প্রস্তুত করেন। রওজার চতুষ্পার্শ্ব প্রাচীরে পরিবেষ্টিত। হিজরী ৫৫০ সালে ইস্পাহান নিবাসী জামালদ্দিন, চন্দন কাষ্ঠের ঝাজুরিদার রেল দ্বারা রওজার চতুর্দ্দিক আবদ্ধ করিয়া দেন। সেই সময়ে এবনে আবুয়ল হাজী শরীফ মিশরের বহুমূল্য শ্বেতবর্ণ চাদর আনাইয়া, উক্ত চাদরের উপরে লোহিতবর্ণ রেশমসূত্রে কোর-আন শরীফের সুরা ইয়াসীন লিখাইয়া তদ্দারা ঐ পবিত্র সমাধি আবৃত করেন, সেই সময় হইতে আবরণপ্রথা প্রতি বৎসর প্রচলিত হইয়াছে। যিনি মিশরের রাজসিংহাসনে উপবেশন করেন, তিনি বহুমূল্য নূতন বস্ত্র দ্বারা প্রতি বৎসর ঐ সমাধিমন্দির আবৃত করিয়া থাকেন। বিনা বাক্যব্যয়ে সেই প্রথা আজও