পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৫২

আবশ্যক হইয়া উঠিত, হাসান-হোসেন উভয়ে মাতামহের সমাধিপ্রাঙ্গণে আসিয়া যুক্তি, পরামর্শ এবং কর্ত্তব্য বিষয়ে মত স্থির করিতেন। আজ কিসের মন্ত্রণা? কি বিপদ? বাহ্যিকভাবে, মুখের আকৃতিতে স্পষ্টই যেন কোন ভয়ানক চিন্তার চিত্র চিত্রিত। কি চিন্তা? পাঠক! ঐ দেখুন, সমাধিপ্রাঙ্গণে সীমানির্দ্দিষ্ট স্থানের নিকটে কে দাঁড়াইয়া আছে।

 প্রভু মোহাম্মদের সমাধিপ্রাঙ্গণের সীমামধ্যে অন্য কাহারও যাইবার রীতি নাই। দর্শক, পূজক, আগন্তুক সকলের জন্যই চতুষ্পার্শস্থ নির্দিষ্ট সীমার বাহিরে থাকিয়া জেয়ারাত (ভক্তিভাবে দর্শন) করিবার প্রথা প্রচলিত আছে।

 পাঠক! যে লোক দাঁড়াইয়া আছে, উহাকে কি কখনও দেখিয়াছেন? একটু স্মরণ করুন, অবশ্যই মনে পড়িবে। এই আগন্তুক দামেস্কের কাসেদ। আর হাসানের হস্তে ঐ যে কাগজ দেখিতেছেন, ঐখানি সেই পত্র—যাহা দামেস্কের রাজদরবারে মারওয়ান পড়িয়া শুনাইয়াছিলেন। ওমর বলিলেন, “কালে আরও কত হইবে। এজিদ মাবিয়ার পুত্র। যে মাবিয়া নূরনবী হজরত মোহাম্মদের প্রধান ভক্ত ছিলেন, দেহ-মন-প্রাণ সকলই আপনার মাতামহের চরণে সমর্পণ করিয়াছিলেন, আজ তাঁহার পুত্র মক্কা-মদিনার খাজানা চাহিতেছে! এজিদের নামে খোৎবা পাঠ করিতে লিখিয়াছে! কি আশ্চর্য্য! আরও কতই হইবে, তাহা কে বলিতে পারে?”

 আবদর রহমান বলিলেন, “এজিদ পাগল হইয়াছে! নিশ্চয়ই পাগল! পাগল ভিন্ন আর কি বলিব? এই অসীম জগতে এমন কেহই নাই যে আমরা বাঁচিয়া থাকিতে মক্কা-মদিনার কর চাহিতে পারে। এজিদ যে মুখে এই সকল কথা বলিয়াছে, সেই মুখের শাস্তি বিশেষ করিয়া দেওয়া উচিত।

    পর্য্যন্ত চলিয়া আসিতেছে। ৬৭৮ হিজরীতে কালাউন সালেহীর রাজত্বকালে মদিনার মসজিদের ছাদ হইতে উচ্চ সবুজ রঙ্গের “কোব্বা” (চূড়া) সমাধি মন্দিরের উপর স্থাপিত হইয়াছে। সেই সুরঞ্জিত উচ্চ চূড়া আজও পর্য্যন্ত অক্ষয়ভাবে রহিয়াছে। হিজরী এক হাজার (১০০০) সালে সুলতান সোলেমান খাঁরুম রওজা শরীফের প্রাঙ্গণ শ্বেতবর্ণ প্রস্তর দ্বারা মণ্ডিত কৱাইয়াছেন, ওমর এব্‌নে আদুল আজিজ খানের শাসন-কালের পর রওজা প্রাঙ্গণের মধ্যে সাধারণের প্রবেশ নিবিদ্ধ হইয়াছে। যাত্রীরা চতুষ্পার্শ্বস্থ রেলিংয়ের বাহিরে থাকিয়া দর্শনলাভ করে। চতুষ্পার্শ্বস্থ রেলিং বস্ত্রাবরণে সদাসর্ব্বদা আবৃত থাকে।