পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৩
মহরম পর্ব্ব—দশম প্রবাহ

ইহাতে পরামর্শ আর কি? আমার মতে কাসেদকে পত্রসহ অপমান করিয়া তাড়াইয়া দেওয়াই সমুচিত বিধি। এ পাপপূর্ণ কথাঙ্কিত পত্র পুণ্যভূমি মদিনায় থাকিবার উপযুক্ত নহে।”

 ওমর বলিলেন, “ভাই! তোমার কথা অবহেলা করিতে পারি না। দুরাত্মার কি সাহস! কোন মুখে এমন কথা উচ্চারণ করিল? কি হিসাবে পত্র লিখিয়া কাসেদের হস্তে দিয়া পাঠাইল? উহার নিকটে কি কোন ভাল লোক নাই? এক মাবিয়ার সঙ্গে সঙ্গে দামেস্ক হইতে কি সকলেই চলিয়া গিয়াছে?”

 আবদুর রহমান বলিলেন, “পশুর নিকটে কি মানুষের আদর আছে? হামান—নামে মাত্র মন্ত্রী। হামানের কোন কথাই এজিদ শুনিতে চায় না। মারওয়ানই আজকাল দামেস্কের প্রধান মন্ত্রী, সভাসদ, প্রধান মন্ত্রদাতা, এজিদের প্রধান গুরু; বুদ্ধি, বল, যাহা কিছু সকলই মারওয়ান—এই ত সকলের মুখে শুনিতে পাই!”

 হাসান বলিলেন, এ যে মারওয়ানের কার্য্য তাহা আমি পূর্ব্বেই জানিতে পারিয়াছি। যাহা হউক, আমার বিবেচনায় এ পত্র ফিরাইয়া দেওয়াই উচিত।”

 হজরত এমাম হাসানের কনিষ্ঠ ভ্রাতা হজরত হোসেন একটু রোষভরে বলিতে লাগিলেন, “আপনারা যাহাই বলুন, আর যাহাই বিবেচনা করুন, কেবলমাত্র পত্রখানা ফেরত দেওয়া আমার ইচ্ছা নহে। কম্‌জাৎ বাঁদীবাচ্ছা কী ভাবিয়াছে? ওর এতদূর স্পর্ধা যে, আমাদিগকে তার অধীনতা স্বীকার করিতে পত্র লিখে? আমরা তাকে শাহান্‌শাহ (সম্রাট) বলিয়া মান্য করিব? যাহাদের পিতার নামে দামেস্ক-রাজ্য কাঁপিয়া উঠিয়াছে, তাঁহাদের আজ এতদূর অপমান! যাঁহার পদভরে দামেস্ক-রাজ্য দলিত হইয়া বক্ষে সিংহাসন পাতিয়া তাঁহাকে বসিবার স্থান দিয়াছে এবং নিয়মিতরূপে কর যোগাইয়াছে, আমরা তাঁহারই সম্ভান—তাঁহারই উত্তরাধিকারী। আমরাই দামেস্কের রাজা, দামেস্কের সিংহাসন আমাদেরই বসিবার স্থান। কম্‌জাৎ কাফের সেই সিংহাসনে বসিয়া আমাদেরই নিকট মক্কা-মদিনার খাজানা চাহিয়াছে, ইহা কি সহ্য হয়?”