পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৭
মহরম পর্ব্ব—দশম প্রবাহ

পরাস্ত হও, নিরুৎসাহ হইও না, হাসান-হোসেনের বধ-সঙ্কল্প হইতে কখনই চ্যুত হইও না, দামেস্কেও ফিরিও না। মদিনার নিকটবর্ত্তী কোন স্থানে থাকিয়া তোমার চিরবন্ধুর চিরশত্রুর প্রাণসংহার করিতে যত্ন করিও। ছলে হউক, বলে হউক, কৌশলে হউক, কিংবা অর্থে ই হউক, প্রথমে হাসানের জীবন-প্রদীপ তোমার হস্তে নির্ব্বাণ হওয়ার শুভ-সংবাদ আমি শুনিতে চাই। হাসানের প্রাণবিয়োগজনিত জয়নাবের পুনঃ বৈধব্য ব্রত আমি সানন্দচিত্তে শুনিতে চাই। আর কি বলিব? তোমর অজানা আর কি আছে?”

 সৈন্যদিগকে সম্বোধন করিয়া মারওয়ান বলিতে লাগিলেন, “বীরগণ! তোমাদের প্রভুর আজ্ঞা সকলেই স্বকর্ণে শুনিলে। আমার আর বলিবার কিছুই নাই। ভ্রাতৃগণ! এখন একবার দামেস্ক-রাজের জয়নাদে আকাশ ফটাইয়া, জগৎ কঁপাইয়া, মনের আনন্দে দ্বিগুণ উৎসাহে এখনই যাত্রা কর। মারওয়ান ছায়ার ন্যায় তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকিবে।”

 সৈন্যগণ বীরদর্পে ঘোর নাদে বলিয়া উঠিল, “জয় মহারাজ এজিদের জয়! জয় মহরাজ দানেস্করাজের জয়!”

 কাড়া, নাকাড়া, ডঙ্কা গুড়্ গুড়্ শব্দে বাজিয়া যেন বিনামেঘে মেঘগর্জ্জনের ন্যায় অবিরত ধ্বনিত হইতে লাগিল। আজ অকস্মাৎ বিনামঘে হৃদয়কম্পন, বজ্রধ্বনির ন্যায় ভীমনাদ শ্রবণে নগরবাসীরা ভয়াকুলচিত্তে বাহিরে অসিয়া দেখিলেন: গগনে মেঘের সঞ্চারমাত্র নাই, কিন্তু রাজপথ প্রস্তররেণু ও বালুকাকণাতে অন্ধকারাচ্ছন্ন; অসংখ্য সেনা রণবাদ্যে মাতিয়া শুভসূচক বিজয়-নিশান উড়াইয়া মদিনাভিমুখে চলিয়াছে। নগরবাসিগণের মধ্যে কাহারও মনে ব্যথা লাগিল, কাহারও চক্ষু জলে পূর্ণ হইল, কেহ কেহ এজিদের জয়ধ্বনি করিয়া আনন্দ অনুভব কবিল।

 এজিদ মহোৎসবে নগরের অন্তঃসীমা পর্য্যন্ত সৈন্যদিগের সঙ্গে সঙ্গে যাইয়া মারওয়ান, সৈন্যগণ ও সৈন্যাধ্যক্ষ অলীদের নিকটে বিদায় লইয়া নগরে ফিরিয়া আসিলেন।

 মদিনাবাসীরা কিছু দিন এজিদের কথা লইয়া বিশেষ আলোচনা করিলেন। সর্ব্বসাধারণের অন্তরেই এজিদের পত্রের প্রতি ছত্র, প্রতি