পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৫৮

অক্ষর, সুতীক্ষ্ণ তীরের ন্যায় বিঁধিয়াছিল। হাসান-হোসেনের প্রতি এজিদ যেরূপ অপমানসূচক কথা ব্যবহার করিয়াছে, তাহার শাস্তি কোথায় হইবে, ঈশ্বর যে কি শাস্তি প্রদান করিবেন, তাঁহারা তাহা ভাবিয়াও স্থির করিতে পারিলেন না। প্রবীণেরা দিবারাত্র হাসান-হোসেনের মঙ্গলকামনায় ঈশ্বরসমীপেও প্রার্থনা করিতে লাগিলেন। পূর্ণবয়স্কেরা বলিতে লাগিলেন, “আমরা বাঁচিয়া থাকিতে কাহার সাধ্য যে, এমাম হাসান হোসেনের প্রতি দৌরাত্ম্য করে? আমরা বাঁচিয়া থাকিতে যে নরাধম এমামের প্রতি অযথা ব্যবহার করিবে, তাহাকে শীঘ্রই নরকের জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে জ্বলিতে হইবে।” নব্য যুবকেরা বলিতে লাগিলেন, “দামেস্কের কাসেদকে একবার দেখিতে পাইলে মদিনার খাজানা দিয়া বিদায় করিতাম। এত দিতাম যে, বহন করিয়া লইয়া যাইতে তাহার শক্তি থাকিত না। দেহটি এখানে রাখিয়া শুধু প্রাণ লইয়া দামেস্কে ফিরিয়া যাইতে হইত।” স্ত্রী-পুরুষমাত্রেই এজিদের নামে শত শত পাদুকাঘাত করিলেন। কিছু দিন গত হইলে, দামেস্কের আর কোন সংবাদ নাই। এজিদের সম্বন্ধে আন্দোলন ক্রমে ক্রমে অনেক পরিমাণে কমিয়া আসিল।

 মদিনাবাসীরা আপন গৃহে শুইয়া আছেন, নিশা প্রায় অবসান হইয়া আসিয়াছে, এমন সময় সহসা নাকাড়ার শব্দ শুনিতে পাইয়া অগ্রে নগর-প্রান্তের অধিবাসীরা জাগিয়া উঠিলেন, অসময়ে রণবাদ্যের কোন কারণই নির্ণয় করিতে পারিলেন না। প্রভাত নিকটবর্ত্তী। ইহার সঙ্গে সঙ্গে সেই বাজনাও নিকটবর্ত্তী হইতে লাগিল। সূর্য্যোদয় পর্য্যন্ত নগরের প্রায় সমস্ত লোকের কাণেই সেই তুমুল ঘোর রণবাদ্য প্রবেশ করিয়া দীর্ঘসূত্রীরও নিদ্রাভঙ্গ করিল। অনেকে নগরের বাহির হইয়া দেখিলেন যে, বহুসংখ্যক সৈন্য বীরদর্পে গম্যপথ অন্ধকার করিয়া নগর-অভিমুখে আসিতেছে। সূর্য্যদেব সহস্র কিরণে মদিনাবাসীকে নিজ মূর্ত্তি দেখাইয়া এজিদের চিহ্নত পতাকা এবং সৈন্যদিগের নূতন সজ্জা দেখাইলেন। সকলেই স্থিরসিদ্ধান্ত করিলেন যে, হাসান-হোসেনকে নির্য্যাতন এবং তাঁহাদের প্রাণহরণ-মানসে এজিদ সসৈন্যে সমরে আসিতেছেন।

 আবদুর রহমান আর বিলম্ব করিলেন না। দ্রুত গমন করিয়া হাসান-