পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু ৫৯
মহরম পর্ব্ব—দশম প্রবাহ

হোসেনের নিকট সমুদয় বৃত্তান্ত জানাইলেন; তাঁহারা আর কালবিলম্ব না করিয়া এজিদের বিরুদ্ধে জেহাদ (ধর্ম্মযুদ্ধ) ঘোষণা করিয়া যুদ্ধের আয়োজনে ব্যস্ত হইলেন। মুহূর্ত্তমধ্যে মদিনার ঘরে ঘরে জেহাদ-রবের প্রতিধ্বনি হইতে লাগিল। মোহাম্মদীয়গণ জেহাদের নাম শুনিয়া আহ্লাদে নাচিয়া উঠিলেন। বিধর্ম্মীর অস্ত্রাঘাতে প্রাণত্যাগ করিলেই শহীদ (ধর্ম্মযুদ্ধে শোণিতপাতে প্রাণত্যাগে মুক্ত) হয়, স্বর্গের দ্বার শহীদদিগের নিমিত্ত সর্ব্বদাই খোলা রহিয়াছে,—ধর্ম্মযুদ্ধে বিধর্ম্মীর অস্ত্রাঘাতের রক্তপ্রবাহে মোহাম্মদীয়গণের সমুদয় পাপ বিধৌত হইয়া পবিত্রভাবে পুণ্যাত্মা রূপধারণে শহীদগণ নির্ব্বিচারে যে স্বর্গসুখে সুখী হন, ইহা মুসলমানমাত্রেরই অন্তরে অনন্তকাল পর্য্যন্ত জাগিবে।

 মদিনার বালক, বৃদ্ধ, পূর্ণরয়স্ক সকলেই রণবেশে সুসজ্জিত হইতে লাগিলেন। নগরবাসীরা হাসান-হোসেনকে প্রাণাপেক্ষাও ভালবাসিতেন। ঘোষণা প্রচার হইতে না হইতেই সহস্রাধিক লোক কাহারও আদেশের অপেক্ষা না করিয়া যাহার যে অস্ত্র আয়ত্তে ছিল, যাহার যে অস্ত্র সংগ্রহ ছিল, যে যাহা নিকটে পাইল, তাহাই লইয়া বেগে শত্রুর উদ্দেশে ধাইয়া চলিল। তদৃষ্টে এজিদের সৈন্যগণ আর অগ্রসর হইল না; গমনে ক্ষান্ত দিয়া শিবির-নির্ম্মাণে প্রবৃত্ত হইল। নগরবাসীরও শত্রুপক্ষকে নিরুদ্যম দেখিয়া আর অগ্রসর হইলেন না, নগরেও আর ফিরিলেন না; বৃক্ষমূলে প্রস্তরোপরি স্ব স্ব সুবিধামত স্থান নির্ণয় করিয়া হজরত হাসানের অপেক্ষায় রহিলেন। এবং এজিদের সৈন্যগণ বহুমূল্য বস্ত্রাদি দ্বারা শিবির রচনায় প্রবৃত্ত হইয়াছে, এ সংবাদ হোসেনের নিকট পাঠাইলেন।

 হোসেন ও আবদর রহমান প্রভৃতি আত্মীয়-স্বজন সমভিব্যাহারে রওজা মোবারকে যাইয়া, হাসান প্রথমেই ঈশ্বরের উপাসনা করিলেন— “দয়াময়! আমার ধনবল, বুদ্ধিবল, সৈন্যবল কিছুই নাই। তোমার আজ্ঞানুবর্ত্তী দাসানুদাস আমি। তুমি দয়া করিয়া এ দাসের অন্তরে যে বল দিয়াছ, সেই ধর্ম্মবলই আমার সাহস এবং উৎসাহ। দয়াময়! সেই বলের বলেই আমি এজিদকে—এক এজিদ কেন, শত শত এজিদকে