বিবি জয়নাব আমার সহধর্ম্মিণী হইয়াছেন, সেই ক্রোধে এজিদ আমার প্রাণবধ করিবে। তাহা হইলে এজিদের উভয় উদ্দেশ্যই সাধিত হইবে; কারণ, আমার মদিনার সিংহাসন তাহারই অধিকৃত হইবে মনে করিয়াছে। সেই বিধর্ম্মী এজিদ নূরনবী হজরত মোহাম্মদের বিরােধী, ঈশ্বরের বিরােধী, পবিত্র কোর-আণের বিরােধী। নরাধম এমনই পাপী যে, ভ্রমে কখনও ঈশ্বরের নাম মুখে আনে না। ভাই সকল! আমরা যে রাজ্যে বাস করি, যে রাজা আমাদের সুবিধার জন্য কত উপকরণ, কত সুখসামগ্রী সৃষ্টি করিয়াছেন—বিনা স্বার্থে, বিনা প্রত্যুপকারের আশায় যে রাজা অকাতরে কত কি দান করিয়াছেন, আমরা আজ পর্য্যন্ত সে দানের উদ্দেশ্যের কণামাত্রও বুঝিয়া উঠিতে পারি নাই। সেই অদ্বিতীয় রাজার বিরুদ্ধাচারী আজ পুণ্যভূমি মদিনা আক্রমণ করিতে—আমাদের স্বাধীনতা হরণ করিতে, —ধর্ম্মপথে কাঁটা ছড়াইতে, মূল উদ্দেশ্য—আমার জীবন-প্রদীপ নির্ব্বাণ করিতে অগ্রসর হইয়াছে। মহাশক্তিসম্পন্ন মহাপ্রভু জগৎপিতার নামে সে কত কলঙ্ক রটাইয়াছে। জগদীশ্বর মহান্, তাঁহার মহিমা অপার, তাঁহাতে ক্রোধ, বিরাগ, দুঃখ, অপমান কিছুই নাই। কিন্তু আমরা সহ্যগুণবিহীন মানব,—আমাদের রিপু-সংযম অসাধ্য। যে কেহ ঈশ্বরের বিরােধী, আমরা তাহার বিরোধী। আমরা কি সেই বিরোধীর প্রতিবিধান করিব না? আমাদের অস্ত্র কি চিরকালই কোষে আবদ্ধ থাকিবে? বিধর্ম্মীর মুণ্ডপাত করিতে সেই অস্ত্র কি নিষ্কোষিত হইয়া কাফেরের রক্তে রঞ্জিত হইবে না? ঈশ্বরের প্রসাদে জয়-পরাজয় উভয়ই আমাদের মঙ্গল। যদি তাঁহার কৃপায় বিধর্ম্মীর রক্ত আজ মদিনা-প্রান্তরে বহাইতে পারি, ভাল, তাহা না হইলে ধর্ম্মরক্ষা, জন্মভূমির স্বাধীনতা রক্ষা করিতে বিধর্ম্মীর অস্ত্রে যদি আত্মবিসর্জ্জন করিতে হয়, তাহাতেও অক্ষয় স্বর্গলাভ। ভ্রাতৃগণ! আজ আমাদের এই স্থির প্রতিজ্ঞা যে, হয় জন্মভূমির স্বাধীনতা রক্ষা করিয়া মােহাম্মদীয় ধর্ম্মের উৎকর্ষ সাধন করিব, না হয়, অকাতরে রক্তস্রোতে আমাদের এই অস্থায়ী দেহ খণ্ডে খণ্ডে ভাসাইয়া দিব।”
এই পর্য্যন্ত শুনিয়াই শ্রোতৃগণ সমস্বরে “আল্লাহো আকবর” বলিয়া