পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৬২

পাগলের ন্যায় কাফেরের মুণ্ডপাত করিতে ছুটিলেন। হাসান সকলকে একত্র শ্রেণীবদ্ধ করিয়া লইয়া সমরক্ষেত্রে যাইতে মনস্থ করিয়াছিলেন; তাহা আর হইল না, কেহই তাঁহার কথা শুনিল না।

 হাসান-হোসেন এবং আবদর রহমান পুনরায় অশ্বারোহণে কিছু দূর গমন করিয়া যে দৃশ্য দর্শন করিলেন, তাহাতে হাসান আর অশ্রুসম্বরণ করিতে পারিলেন না; আবদর রহমানকে বলিলেন, “ভাই! তুমি যত শীঘ্ন পার, হোসেনের সহিত যাইয়া মদিনাবাসীদের পৃষ্ঠপোষক হও। আমি অবলাগণকে বিদায় দিয়া আসিতেছি। ইঁহাদের এ বেশ আমার চক্ষে বড়ই কষ্টকর বোধ হইতেছে। আমি বাঁচিয়া থাকিতে ইঁহাদের হস্তে অস্ত্রসম্ভার দেখিতে হইল! ভাই! ইহা অপেক্ষা আর দুঃখ কি? তোমর যাও, আর অপেক্ষা করিও না।”

 এই বলিয়া অশ্ব হইতে নামিয়াই এমাম হাসান অতি বিনীতভাবে নারিগণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “ভগ্নীগণ! নগরের প্রান্তভাগে মহাশত্রু! নগরবাসীরা আজ শত্রুবধে উন্মত্ত, জন্মভূমি রক্ষা করিতে মহাব্যস্ত। এই বিপদ সময়ে আপনারা এ বেশে কোথায় যাইতেছেন?

 স্ত্রীলোকদিগের মধ্যে একজন বলিলেন, “হজরত! আর কোথায় যাইব? আপনাদের এই মহাবিপদকালেও কি আমরা অবলাচারের বাধ্য হইয়া অন্তঃপুরেই আবদ্ধ থাকিব? ভ্রাতা, পুত্র, স্বামী, সকলকেই শত্রুমুখে পাঠাইয়াছি, ফিরিয়া আসিতে পাঠাই নাই—একেবারে চিরবিদায় প্রদান করিয়াছি।—আর আমাদের পৃথিবীতে থাকিবার প্রয়োজন কি? আপনার জন্য স্বামী, পুত্র ভ্রাতা যে পথে যাইবে, আমরাও সেই পথের অনুসরণ করিব; বিপদ সময়ে অবশ্যই কিছু না কিছু সাহায্য করিতে পারি। আর তাহারাই যদি বিধর্ম্মীর রক্তে রঞ্জিত হইয়া ধর্ম্মরক্ষা ও জন্মভূমি রক্ষা করিতে পারে, তবে আমরাই বা কাফেরের মাথা কাটিতে অস্ত্রগ্রহণ করিব না কেন? নূরনবী হজরত মোহাম্মদের পবিত্র দেহ যে মদিনা ক্রোড়ে ধারণ করিয়া রহিয়াছে, রোজ-কেয়ামত পর্য্যন্ত থাকিবে, সেই মদিনা এজিদ অধিকার করিবে? যে মদিনার পবিত্রতা গুণে জগতের চারিদিক হইতে কোটি কোটি ভক্ত কত কষ্ট স্বীকার