বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ “বিষাদ-সিন্ধু” প্রণেতা মীর মোশার্রফ হোসেন ১৮৪৮ খৃষ্টাব্দে নদীয়া জেলার কুমারখালির নিকটবর্তী গৌরীতটস্থ লাহিনীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ইহাদের পারিবারিক উপাধি “সৈয়দ। কিন্তু ইহাদের কোন এক পূর্বপুরুষ নবাব-সরকারে চাকরি করিতেন। সেই চাকরীর পদমর্যাদা অনুসারে তাহারা বংশগত ভাবে “মীর” উপাধি লাভ করেন।
মোশার্রফ হোসেনের প্রাথমিক শিক্ষা আরম্ভ হয় গ্রামের জগমোহন নন্দীর পাঠশালায়। এখানে সেকেলে নিয়মে বাংল-শিক্ষা লাভ করিবার পর মোশারফ হোসেন আসিলেন কুষ্টিয়ার ‘ইংরাজীবাংলা স্কুলে। এখানেও বেশীদিন তাহার পড়াশুনা চলিল না। অতঃপর পদমদীর নবাব-স্কুলে এক বৎসর পড়িবার পর তিনি—পি মীর মোয়াজ্জম হোসেন সাহেবের নির্দেশে ‘কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের ৫ম শ্রেণীতে ভর্তি হইলেন। কিছুদিন পরে তিনি সঙ্গীদের সহিত কলিকাতায় বেড়াইতে আসেন। মৌলভী নাদির হোসেন নামক তঁহার এক পিতৃবন্ধু চেতলায় বাস করিতেন, ইনি আলিপুরের আমিন ছিলেন। মোশারফ হোসেন আসিয়া তাহার বাসায় উঠিলেন। পিতৃবন্ধুর অগ্রহাতিশয্যে ও পিতার অনুমতিক্রমে মোশারফ হোসেন তাহার বাসায় থাকিয়া লেখাপড়া শিখিতে লাগিলেন।
চেতলায় অবস্থানকালে মৌলভী নাদির হোসেনের প্রথমা কন্যা লতিফুন্নেসার সহিত মোশারফ হোসেনের বিবাহ-সম্বন্ধ স্থির হয়। এই সংবাদ মোশারফের পিতামাতা অথবা বাড়ীর অন্য কেই জানি না। নানা কারণে এই নির্দিষ্ট কন্যার সহিত বিবাহ না দিয়া নাদির হোসেন সাহেব দ্বিতীয় কন্যা মোসাম্মৎ আজিজুন্নেসার সহিত তাহার বিবাহ দেন। ১৮৬৫ খৃষ্টাব্দের ১৯শে মে এই বিবাহ কার্য্য অনুষ্ঠিত হয়। পিতৃবন্ধুর এই আচরণে মোশারফ হোসেন অত্যন্ত দুঃখিত হইয়াছিলেন। এবং ইহার আট বৎসর ঋরে তিনি পুনরায় বিবাহ করেন। তাহার এই নবপরিণীতা স্ত্রীর নাম বিবি কুলসুম। বিবি কুলসুমের অনেকগুলি পুত্রকন্যা হইয়াছিল।