পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৩
মহরম পর্ব্ব—দশম প্রবাহ

করিয়া শুধু একবার রওজা শরীফদর্শন করিতে আসিতেছে, সেই পবিত্র ভূমি কাফেরের পদস্পর্শে কলঙ্কিত হইবে? এ কথা শুনিয়া কে স্থির হইয়া ঘরে থাকিতে পারে? আরও দেখুন—আমরা অবলা, পরাধীন, যাহাদের মুখাপেক্ষী, তাহারাই যখন অস্ত্র-সম্মুখে, তখন আমরা শূন্যদেহ লইয়া কেন আর ঘরে থাকিব?”

 আর একটি স্ত্রীলোক কহিলেন, “হজরত! আমরা যে কেবল সন্তানসন্ততি প্রতিপালন করিতে শিখিয়াছি, তাহা মনে করিবেন না। এই হস্ত বিধর্ম্মীর মস্তক চূর্ণ করিতে সক্ষম, এই হস্তে কাফেরের মুণ্ডপাত করিতেও আমরা জানি। সামান্য রক্তবিন্দু দেখিলেই আমাদের মন কাঁপিয়া উঠে, অঙ্গ শিহরিয়া উঠে, হৃদয়ে বেদনা লাগে, কিন্তু কাফেরের লোহিত রক্ত-তরঙ্গের শোভা দর্শনে আনন্দে ও উৎসাহে আমাদের মন যেন নচিতে থাকে।”

 বিস্মিত হইয়া হাসান বলিলেন, “আমি আপনাদের অনুগত এবং আজ্ঞাবহ, আমি বাঁচিয়া থাকিতে বিধর্ম্মীবধে আপনাদিগকে অস্ত্র ধরিতে হইবে না। আমার বংশ বাঁচিয়া থাকিতে আপনাদিগকে এ বেশ পরিতে হইবে না। ভগ্নীগণ! আপনার ঘরে বসিয়া ঈশ্বরের নিকট ধর্ম্ম ও জন্মভূমির রক্ষার জন্য কায়মনে প্রার্থনা করুন। আমরা অস্ত্রমুখে দাঁড়াইব। আপনারা ঈশ্বরের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আমাদিগকে রক্ষা করিবেন। আমি মিনতি করিয়া বলিতেছি, আপনারা শত্রু-সম্মুখীন হইয়া আমার মনে বেদনা প্রদান করিবেন না।”

 প্রথম নারী সবিনয়ে বলিলেন, “আপনার আদেশ প্রতিপালন করিলাম; কিন্তু ইহা নিশ্চয়ই জানিবেন যে, মদিনার একটি অবলার দেহে প্রাণ থাকিতে এজিদ কদাপি নগরের সীমায় আসিতে পারিবে না।” এই কথা বলিয়া স্ত্রীলোকের দুই হস্ত তুলিয়া ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিতে লাগিলেন,—“এলাহি! আজ আপনার নামের উপর নির্ভর করিয়া হাসানকে শত্রুসম্মুখে দিলাম। হাসানের প্রাণ, পবিত্র ভূমি, মদিনার স্বাধীনতা এবং ধর্ম্মরক্ষা করিতে ভ্রাতা, পুত্র ও স্বামীহারা হইলেও আমরা কাতর হইব না। এলাহি! স্বামী, পুত্র, ভ্রাতৃগণ বিধর্ম্মীর অস্ত্রে প্রাণত্যাগ করিলে আমাদের চক্ষে কখনই জল আসিবে না। কিন্তু মদিনা নগর কাফেরের