সেই শোভা বিধর্ম্মীর চক্ষে ভীষণভাবে প্রতিফলিত হইতেছে। অশ্বের পদনিক্ষিপ্ত রক্তমাখা বালুকার উৎক্ষিপ্ততা দেখিয়াই অনেকে ছিন্ন দেহের অন্তরালে লুকাইয়া হোসেনের তরবারি হইতে প্রাণ বাঁচাইতেছে। বামে দক্ষিণে হোসেনের দৃষ্টি নাই। যাহাকে সম্মুখে পাইতেছেন, তাহাকেই নরকে পাঠাইতেছেন।
একাদশ প্রবাহ
হাসান অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত এক স্থানে দাঁড়াইয়া ক্রমে ক্রমে অগ্রসর হইয়া ভীষণ যুদ্ধ দর্শন করিতে লাগিলেন। হস্তপদ-খণ্ডিত অগণিত দেহ, শোণিত-প্রবাহে সম্পূর্ণ ডুবিয়া, কতক অর্দ্ধাংশ ডুবিয়া, রক্তস্রোতে নিম্নস্থানে গড়াইয়া যাইতেছে। মদিনাবাসীদের মুখে কেবল “মার! মার! কোথায় এজিদ? কোথায় মারওয়ান?” এই মাত্র রব। মধ্যে মধ্যে নানাপ্রকার ভীষণতর কাতর স্বর হাসানের কর্ণগোচর হইতে লাগিল।
মদিনাবাসীরা প্রথমে বিধর্ম্মীর মস্তক ভিন্ন আর কিছুই দেখেন নাই; ক্রমে ক্রমে দুই একটি স্বজনের প্রতি তাহাদের দৃষ্টি পড়িল। হোসেনও আবদর রহমান প্রভৃতিকে দেখিয়াছেন, অথচ কেহ কাহারও কোন সন্ধান লন নাই, কাহাকেও কেহ কিছু জিজ্ঞাসাও করেন নাই। এক্ষণে পরস্পর পরস্পরের সহিত দেখা করিতে লাগিল। যাহারা তাঁহাদের দৃষ্টিপথের প্রতিবন্ধকতা জন্মাইয়াছিল, ঈশ্বর-কৃপায় তাহারা আর নাই, প্রায় সকলেই রক্তস্রোতে ভাসিয়া যাইতেছে। ক্রমে সকলেই একত্র হইতে লাগিলেন। দেখিতে দেখিতে হাসানেরও দেখা পাইলেন। সকলেই উচ্চৈঃস্বরে ঈশ্বরের নাম জপ করিয়া জয়ধ্বনির সহিত “লাএ-লাহা ইল্লাল্লাহ্ মোহাম্মদর রসুলাল্লাহ্” বলিয়া যুদ্ধে ক্ষান্ত দিলেন। অনন্তর রক্তমাখা শরীরে, আহত অঙ্গে, মনের আনন্দে হাসানের সহিত সকলে আলিঙ্গন করিলেন। হাসানও সকলকে আশীর্ব্বাদ করিয়া সমস্বরে ঈশ্বরের নাম করিতে করিতে সিংহদ্বার অতিক্রম করিয়া নগরমধ্যে প্রবেশ করিলেন। বালক, বৃদ্ধ ও স্ত্রীলোকেরা পথের দুই পার্শ্ব হইতে