পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৭
মহরম পর্ব্ব—দ্বাদশ প্রবাহ

চিন্তায় আর ফল কি? পুনরায় চেষ্টা কর! মহারাজ এজিদের আজ্ঞা মনে কর। যে-‘যদি’ শব্দে তাঁহার হৃদয় কাঁপিয়া উঠিয়াছিল, তাহাই যদি সফল হইল, তবে ইহা ত নূতন ঘটনা নহে। মহারাজের আজ্ঞা শেষ পর্য্যন্ত পালন করিয়া যাইব,জীবন লইয়া আর দামেস্কে ফিরিব না; এ মুখ আর দামেস্কবাসীকে দেখাইব না। পুনরায় সৈন্য-সংগ্রহ করিব, পুনরায় হাসানবধের চেষ্টা করিব। মহারাজ এজিদের অভাব কিসের? সৈন্যগণ! তোমরা একজন এখনই দামেস্ক নগরে যাত্রা কর। যাহা স্বচক্ষে দেখিলে, ভাগ্যবলে মুখে বলিতেও সময় পাইলে, অবিকল মহারাজ-সমীপে সেই মহাযুদ্ধের অবস্থা মহারাজকে বলিও। আরও বলিও যে, মারওয়ান মরে নাই, হাসানের প্রাণসংহার না করিয়া সে মদিনা পরিত্যাগ করিবে না। আরও বলিও যে, মহারাজের শেষ আজ্ঞা প্রতিপালন করিতেই সে এক্ষণে প্রস্তুত হইয়াছে। যত শীঘ্র হয়, পুনরায় সৈন্য সংগ্রহ করিয়া মদিনায় প্রেরণ করুন। আর যাহা স্বচক্ষে দেখিলে, কিছুই গোপন করিও না, তৎসমস্তই তুমি অকপটে প্রকাশ করিয়া বলিও।” মারওয়ানের আজ্ঞামাত্র এম্‌রান নামক এক ব্যক্তি দামেস্ক যাত্রা করিলেন। মারওয়ান ছদ্মবেশে নগরের কোন গুপ্ত স্থানে অলীদের সহিত অবস্থান করিতে লাগিলেন। আর আর সঙ্গীরা নিকটস্থ পর্ব্বতগুহায় মারওয়ানের আদেশক্রমে অবস্থিতি করিতে লাগিল।

দ্বাদশ প্রবাহ

 ঋণের শেষ, অগ্নির শেষ, ব্যাধির শেষ ও শত্রুর শেষ থাকিলে ভবিষ্যতে মহাবিপদ! পুনরায় তাহা বর্দ্ধিত হইলে আর শেষ করা যায় না। রাত্রি দুই প্রহর। মদিনাবাসীরা সকলেই নিদ্রিত। মারওয়ান ছদ্মবেশে নগরভ্রমণ করিয়া ফিরিতেছেন। কতই সন্ধান, কতই গুপ্ত মন্ত্রণা অবধারণ করিতেছেন। কাহারও নিকট মনের কথা ভাঙ্গিতে সাহস পান না! মদিনা তন্ন তন্ন করিয়াও আজ পর্য্যন্ত তিনি মনোমত লোক খুঁজিয়া পান নাই। কেবল একটি বৃদ্ধা স্ত্রীর সহিত কথায় কথায় অনেক কথার আলাপ করিয়াছেন; আকার