পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৯
মহরম পর্ব্ব—দ্বাদশ প্রবাহ

 মায়মুনা বলিলেন, “আপনার কথাবার্ত্তার ভাবে আমি অনেক কিছু জানিতে পারিয়াছি। আমাকে যদি বিশ্বাস করেন, তবে আগে একটি কথা বলি।”

 মারওয়ান কহিলেন, “তোমাকে বিশ্বাস না করিলে মনের কথা ভাঙ্গিব কেন? তোমার কথাক্রমে এই নিশীথসময়ে জনশূন্য পর্ব্বতগুহার নিকটেই বা আসিব কেন? তোমার যাহা ইচ্ছা বল।”

 মায়মুনা কহিল, “কার্য্য শেষ করিলে ত দিবেনই, কিন্তু অগ্রে কিছু দিতে হইবে। দেখুন, অর্থই সব। আমি নিতান্ত দুঃখিনী, আপনার এই কার্য্যটি সহজ নহে। কত দিনে যে শেষ করিতে পারি, তাহার ঠিক নাই। এই কার্য্যের জন্যই আমাকে সর্ব্বদা চিন্তিত থাকিতে হইবে। জীবিকা নির্ব্বাহের জন্য অন্য উপায়ে একেবারে হস্তসঙ্কোচ করিতে হইবে। দিবারাত্র কেবল এই মন্ত্রণা, এই কথা লইয়া ব্যতিব্যস্ত থাকিতে হইবে। আপনিই বিবেচনা করুন, ইহার কোন্‌টি অযথা বলিলাম?

 কথার ভাব বুঝিয়া কয়েকটি স্বর্ণমুদ্রা মায়মুনার হস্তে দিয়া মারওয়ান বলিলেন, “যদি কৃতকার্য্য হইতে পার, সহস্র সুবর্ণ মোহর তোমার জন্য ধরা রহিল।”

 মোহরগুলি রুমালে বাঁধিয়া মায়মুনা বলিল, “দেখুন! যার দুই তিনটি স্ত্রী, তাহার প্রাণবধ করিতে কতক্ষণ লাগে? সে ত ‘আজ-রাইল’কে (যমদূতকে) সর্ব্বদা নিকটে বসাইয়া রাখিয়াছে। তার প্রাণরক্ষা হওয়াই আশ্চর্য্য, মরণ আশ্চর্য্য নয়।”

 মারওয়ান কহিলেন, “তাহা নয় বটে, কিন্তু লোকটি আবার কেমন? যেমন লোক, স্ত্রীরাও তেমনি। দুই তিনটি স্ত্রী হওয়ায় তাহার আর ভয়ের কারণ কি?”

 মায়মুনা কহিল, “ও কথা বলিবেন না। পয়গম্বরই হউন, এমামই হউন, ধার্ম্মিক পুরুষই হউন, আর রাজাই হউন, এক প্রাণ কয়জনকে দেওয়া যায়? ভাগী জুটিলেই নানা কথা, নানা গোলযোগ। সপত্নীবাদ না আছে, এমন স্ত্রী জগতে নাই। সপত্নীর মনে ব্যথা দিতে কোন্ সপত্নীর ইচ্ছা নাই? আমি সে কথা এখন কিছু বলিব না; আপনার প্রতিজ্ঞা যেন ঠিক থাকে।”