পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৭০

 মারওয়ান বলিলেন, “এখানে তুমি আর আমি ভিন্ন কেহই নাই, এ প্রতিজ্ঞার সাক্ষী কাহাকে করি? ঐ অনন্ত আকাশ, ঐ অসংখ্য তারকারাজি, ঐ পূর্ণচন্দ্র, এই গিরিগুহা, আর এই রজনী দেবীকেই সাক্ষী রাখিলাম; হাসানের প্রাণবধ করিতে পারিলেই আমি তোমাকে সহস্র মোহর পুরস্কার দিব। তৎসম্বন্ধে তুমি যখন যাহা বলিবে, সকলই আমি প্রতিপালন করিব। আর একটি কথা, এই বিষয় তুমি ও আমি ভিন্ন জগতে আর কেহই যেন জানিতে না পারে।”

 মায়মুনা বলিল, “আমি একথায় সম্মত হইতে পারি না। কেহ জানিতে না পারিলে কার্য্য উদ্ধার হইবে কি প্রকারে? তবে এই পর্য্যন্ত বলিতে পারি, আসল কথাটি আর এক জনের কর্ণ ভিন্ন দ্বিতীয় জনের কর্ণে প্রবেশ করিবে না।”

 “সে তোমার বিশ্বাস। কার্য্য উদ্ধারের জন্য যদি কাহারও নিকট কিছু বলিতে হয় বলিও; কিন্তু তিন জন ভিন্ন আর একটি প্রাণীও যেন জানিতে না পারে।”

 মায়মুনা বলিল, “হজরত। আমাকে নিতান্ত সামান্যা স্ত্রীলোেক মনে করিবেন না! দেখুন, রাজমন্ত্রীরা রাজ্য রক্ষা করে, যুদ্ধবিগ্রহ বা সন্ধির মন্ত্রণা দেয়, নির্জ্জনে বসিয়া কত প্রকারে বুদ্ধির চালনা করে। আমার এ কার্য্য সেই রাজকার্য্যের অপেক্ষা কম নহে। যেখানে অস্ত্রের বল নাই, মহাবীরের বীরত্ব নাই, সাহস নাই, সাধ্য নাই, সেইখানেই এই মায়মুনা শত অর্গলযুক্ত দ্বারও অতি সহজে খুলিয়া থাকে। যেখানে বায়ুর গতিবিধি নাই, সেখানেও আমি অনায়াসে গমন করি। যে যোদ্ধার অন্তর পাষাণে গঠিত, তাহার মন গলাইয়া মোমে পরিণত করিতে পারি। যে কুলবধূ সূর্য্যের মুখ কখনও দেখে নাই, চেষ্টা করিলে তাহার সঙ্গেও দু’টা কথা কহিয়া আসিতে পারি। নিশ্চয় জানিবেন, পাপশূন্য দেহ নাই, লোকশূন্য জগৎ নাই। যেখানে যাহা খুঁজিবেন তাহাই পাইবেন।”

 মারওয়ান কহিলেন, “মুখে অনেকেই অনেক কথা বলিয়া থাকে, কার্য্যে তাহার অর্দ্ধেক পরিমাণ সিদ্ধ হইলেও জগতে অ-সুখের কারণ থাকিত না,