পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৩
মহরম পর্ব্ব—ত্রয়ােদশ প্রবাহ

নিকটেও কয়েক দিন চক্ষের জল ফেলিয়া সে সপত্নীর নিন্দাবাদ করিয়াছিল। হাস্‌নেবানু থাকিতে কাহারও সুখ নাই, এই প্রকার আরও দুই একটা মানভাঙ্গান-মন্ত্রও আওড়াইয়াছিল। কিন্তু তাহাতে সুফল ফলে নাই। যাহা শুনিয়াছিল, তাহাতে জয়নাবের নিকট চক্ষের জল ফেলিতে আর সাহস করিত না। নিতান্ত আবশ্যক না হইলে জয়নাবের নিকটে আর যাইতও না। জাএদার সহিত তাহার পুরাতন ভালবাসা। জাএদার সঙ্গেই বেশী আলাপ, বেশী কথা, বেশী কান্না। মায়মুনাকে পাইলেই জাএদা মনের কপাট খুলিয়া বসিতেন। পূর্ব্ব কথা, জয়নাব অসিবার পূর্ব্বে হাসানের ভালবাসা, হাসানের আদর-যত্ন, আর এখনকার অবস্থা বলিতে বলিতে জাএদা দুই এক ফোঁটা চক্ষের জল ফেলিতেন, মায়মুনাও সেই কান্নায় যোগ দিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে চক্ষু ফুলাইত। জাএদা ভাবিয়াছিলেন, মদিনার মধ্যে যদি কেহ তাহার দুঃখে দুঃখিত হয়, তবে সে মায়মুনা। দুইটা মুখের কথা কহিয়া সান্ত্বনা দেওয়ার যদি কেহ থাকে, তবে সে মায়মুনা। কাহারও কাছে কোনরূপ উপকারের আসা থাকিলেও সে মায়মুনা। মায়মুনা ভিন্ন সে সময়ে আপন বলিতে জাএদা আর কাহাকেও চক্ষে দেখেন নাই। মায়মুনাকে দেখিয়াই তিনি ব্যস্তভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মায়মুনা? এ কয়েক দিন দেখি নাই কেন?”

 মায়মুনা উত্তর করিল, “তোমার কাজ না করিয়া কেবল যাওয়া আসায় লাভ কি? তুমি ত বলিয়াই মনের ভার পাতলা করিয়াছ; এখন ভোগ আমার, কষ্ট আমার, মেহনত আমার। তা বোন্! তোমার জন্য যদি আমার ঘরকন্না রসাতলে যায়, দীন-দুনিয়ার খারাবী হয়, তাহাও স্বীকার; তথাপি যাহাতে হয়, আমি তোমার উপকার করিবই করিব; আমি ভুলি নাই।”

 জাএদা কহিলেন, “সে সকল কথা আর আমার মনে নাই। পাগলের মত একদিন কি বলিয়াছিলাম, তুমি তাই মনে করিয়া রাখিয়াছ; যাক্, ও কথা থাক, ও তুমি আর কখনই মনে করিও না; তার জন্য আর কোন চেষ্টা করিও না। আমার মাথা খাও, আর ও-কথা মুখে আনিও না। কৌশলে স্বামী-