পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৭৪

বশ, মন্ত্রের গুণে স্বামীর মন ফিরান, মন্ত্রে ভালবাসা, ঔষধের গুণে স্বামী বশে আনা, এ সকল বড় লজ্জার কথা। স্বাভাবিক মনে যে আমার হইল না, তাহার জন্য আর ও-সব কেন? সকলই অদৃষ্টের লেখা। আমি যত্ন করিলে আর কি হইবে? জয়নাবকে মারিয়াই বা কেন পাপের বোঝা মাথায় করি? ঈশ্বর তাহাকে স্বামীসোহাগিনী করিয়াছেন, তাহাতে যে বাধা দিবে, সেই-ই অধঃপাতে যাইরে। আমি সমুদয় বুঝিয়া একেবারে নিরস্ত হইয়াছি। যে আমার হইল না, আমার মুখের দিকে যে ফিরিয়া তাকাইল না, তাহাকে ঔষধের বশ করিয়া লাভ কি বোন! সে বশ কয় দিনের। সে ভালবাসা কয় মুহূর্ত্তের? যদি মন্ত্রের গুণ থাকে, যদি ঔষধের ক্ষমতা থাকে, তাহা হইলেও সে কি আর যথার্থ ভালবাসার মত হয়? ধরে বেঁধে, আর মনের ইচ্ছায়, যে কত প্রভেদ তাহা বুঝিতে পার। মানিলাম, ঔষধে মন ফিরাইবে, নূতন ভালবাসার সহিত শত্রুভাব জন্মাইয়া দিবে; কিন্তু আমাকে যে ভালবাসিবে, তাহার ঔষধ কি? তাহাও যেন হইল,—কারণ, আমি হাতে করিয়া খাওয়াইব, আমাকেই ভালবাসার ভার সহিতে হইবে; কিন্তু ঔষধ ত আর চিরকাল পেটে থাকিবে না। ক্রমেই ঔষধের গুণ কমিতে থাকিবে,— শেষে আমার যে সেই—বরং জ্বালা বাড়িবারই বেশী সম্ভাবনা।”

 ব্যঙ্গচ্ছলে মায়মুনা জিজ্ঞাসা করিল, “তবে কি আপোষ হইয়াছে, না ভাগ-বণ্টন, বিলি-ব্যবস্থা করিয়া ভাগাভাগী করিয়া লইয়াছ?—কিংবা মনের মোকর্দ্দমার শালিসী নিস্পত্তি হইয়া মিট্‌মাট হইয়া গিয়াছে?”

 জাএদা উত্তর করিলেন, “ভাগ-বণ্টন করি নাই, আপোষও করি নাই, মিট্‌মাটও করি নাই, এ জীবনে তাহা হইবেও না; জাএদা বঁচিয়া থাকিতে স্বামী ভাগ করিয়া লইবেও না। মনের খেদে আর কি করি বোন্! দেখে শুনে একেবারে আশা-ভরসায় জলাঞ্জলি দিয়া বসিয়াছি—স্বামীর নাম আর করিব না, স্বামীর কথাও আর মুখে আনিব না। যাহাদের স্বামী, যাহাদের ঘরকন্না, তাহারাই থাকুক—তাহারাই সুখভোগ করুক। জাএদা আজও যে ভিখারিণী, কালও সেই ভিখারিণী।”

 মায়মুনা কহিল, “এত উদাস হইও না। যাহা কর, বুদ্ধি স্থির করিয়া