কাঁদিয়া কাঁদিয়া মায়মুনা বলিতে লাগিল, “জাএদা! তুমি কেন মরিতে চাও? তুমি মনে করিলে কি না করিতে পার? ইচ্ছা করিলেই তোমার দুঃখ দূর হয়; তুমি মনে করিলেই তোমার শত্রুর মুখে ছাই পড়ে। আমি ত আগেই বলিয়াছি, তোমার মনই সব। মনে করিলেই তুমি রাজরাণী, মনে না করিলেই তুমি ভিখারিণী।”
জাএদা জিজ্ঞাসা করিলেন, “মনে করিলেই যদি মনের দুঃখ যায়, তবে জগতে কে না মনে করে?”
মায়মুনা উত্তর করিল “আমি ত আর দশ টাকা লাভের জন্য তোমার মনোমত কথা বলিতেছি না। যাহা বলি, মন ঠিক করিয়া একবার মনে কর দেখি, তোমার মনের দুঃখ কোথায় থাকে?”
জাএদা কহিলেন, “তোমার কোন্ কথাটা আমি মনের সহিত শুনি নাই, মায়মুনা? তুনি আমার পরম হিতৈষিণী। যাহা বলিবে, তাহার অন্যথা কিছুতেই করিব না।”
মায়মুনা কহিল, “যদি মনে না লাগে, তবে করিও না। কিন্তু মন হইতে কখনও মুখে আনিতে পারিবে না! ধর্ম্ম সাক্ষী করিয়া আমার নিকটে প্রতিজ্ঞা কর, এখনই বলিতেছি।”
জাএদা কহিলেন, “প্রতিজ্ঞ আর কি, তোমারই মাথায় হাত দিয়া বলিতেছি, যাহা বলিবে, তাহাই করিব; সে কথা কাহারও নিকট ভাঙ্গিব না।”
উত্তম সুযোগ পাইয়া মায়মুনা অতি মৃদুমৃদু স্বরে মনের অনেক কথা বলিল। জাএদাও মনোনিবেশপূর্ব্বক শুনিতে শুনিতে শেষের একটি কথায় চমকিয়া উঠিলেন,—চমকিতভাবে একদৃষ্টে মায়মুনার মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন। অঙ্গ শিহরিয়া উঠিল! ভয়ে থতমত খাইয়া বলিলেন, “শেষের কাজটি জাএদার প্রাণ থাকিতে হইবে না। এই দুঃখে যদি মরিয়াও যাই, যদি আরও শত শত প্রকার দুঃখ ভোগ করি, সপত্নী-বিষম-বিষে আরও যদি জর্জ্জরিত হই, পরমায়ুর শেষ পর্য্যন্তও যদি এই দুঃখের শেষ না হয়, তথাপি উহা পারিব না। আমার স্বামী আর আমি—আমার প্রাণের প্রাণ—কলিজার টুকরা আর আমি—”