মনে পড়িবামাত্রই পরিমাণদণ্ডের যে দিকে স্বামীর প্রাণ, সেই দিক একেবারে লঘু হইয়া উচ্চে উঠিল। হঠাৎ এক দিকের লঘুতাপ্রযুক্ত রাজভোগ, ও ধনলাভস্পৃহার পরিমাণ একেবারে মৃত্তিকা সংলগ্ন হইয়া জাএদার মন ভারী করিয়া ফেলিল। অনেক চেষ্টা করিয়াও বিবেচনা তুলাদণ্ডে স্বামীর প্রাণের দিক আর নীচে নামাইতে পারিলেন না। মায়মুনার শেষ কথাটাও মনে পড়িল। “তোমার কেহই নাই, তুমি কাহারও নও।”—“এ সংসারে আমার কেহই নাই, আমি কাহারও নহি,” বলিতে বলিতে জাএদা শয্যা হইতে উঠিয়া বসিয়া পুনরায় বলিতে লাগিলেন,—“আমার কেহ নাই, আমি কাহারও নহি। জাএদাই যদি বঞ্চিত হইল, জাএদাই যদি মনের আগুনে পুড়িতে থাকিল, তবে তাহার চক্ষের উপর জয়নাব সুখভোগ করিবে, তাহা কখনই হইবে না! প্রথম শত্রুর প্রতি হিংসা, শত্রুর মনে ব্যথা দেওয়া, পরিণামে একের অভাব বটে! কিন্তু মনের ও অর্থের সুখ অসীম। আমার উভয় পক্ষেই সুখ। মায়মুনার কথার কেন অবাধ্য হইব?”
জাএদা মনে মনে এইরূপ সিদ্ধান্ত করিয়া দর্পণে মুখখানি ভাল করিয় দৈখিয়া বোর্কা পরিধানপূর্ব্বক গৃহ হইতে বহির্গত হইলেন।
চতুর্দ্দশ প্রবাহ
স্ত্রীলোকমাত্রেই সেখানে বোর্কা ব্যবহার করিয়া যথেচ্ছা বেড়াইতে পারে। ভারতের ন্যায় তথায় পাল্কী বেহারা নাই। লক্ষপতি হউন, রাজ-ললনাই হউন, ভদ্রমহিলাই হউন, তিনি বোর্কা ব্যবহার করিয়া যথেচ্ছভাবে ভ্রমণ করিয়া থাকেন। দূরদেশে যাইতে হইলে উষ্ট্রের বা অশ্বের আশ্রয় লইতে হয়।
মায়মুনার গৃহ বেশী দূর নহে। জাএদা মায়মুনার গৃহে উপস্থিত হইয়া বোর্কা মোচনপূর্ব্বক তাহার শয়নকক্ষে যাইয়া বসিলেন। মায়মুনাও নিকটে আসিয়া বসিলেন। আজ জাএদা মনের কথা অকপটে ভাঙ্গিলেন। কথায় কথায়, কথার ছলনায়, কথায় ভর দিয়া, কথা