পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নারীর পত্ৰ Y » (o সুতরাং এই বৈজ্ঞানিক সত্যটিকে সাধারণের নিকট গ্ৰাহ করাতে হলে তাকে ধর্ম ও নীতির সাজে সাজিত করে বাৱ করা দরকার। অতঃপর বৈজ্ঞানিকরা সেই উপায়ই अवश्e कggछभ । সুনীতির ছদ্মবেশধারী বৈজ্ঞানিক মত এই। প্ৰতি লোক নিরীহ হলেও তাদের সমষ্টিতে সমাজ-নামক যে বিরাটপুরুষের সৃষ্টি হয়, সে একটি ভীষণ জীব। এই বিরাটপুরুষের প্রাণ আছে আত্মা নেই, রতি আছে বুদ্ধি নেই, গতি আছে দৃষ্টি নেই। সমাজ শুধু বঁাচতে চায় ও বাড়তে চায়, এই তার জীবনের ধর্ম ; অন্য-কোনো ধৰ্মাধৰ্ম তাকে স্পশ করে না । সমাজ হচ্ছে একমাত্র অঙ্গী এবং ব্যক্তিমাত্রেই তার অঙ্গ। সুতরাং ব্যক্তিমাত্রেই সমাজের অধীন। কিন্তু সমাজ কোনো ব্যক্তিবিশেষের অধীন নয়। এবং যেহেতু সমাজের বাইরে আমাদের কোনো অস্তিত্ব নেই, সে কারণ সমাজকে রক্ষা করা এবং তার অভু্যুদয়সাধন করাই হচ্ছে মানুষের পক্ষে সর্বপ্রধান কর্তব্য। সহস্ৰ সহস্ৰ লোকের আত্মবলিদানের ফলে এই বিরাটপুরুষের দেহ পুষ্ট হয়। লোকে বলে যে, যে মণ্ডপের আঙিনায় লক্ষ বলি হয়, সেখানে একটি কবন্ধভুত জন্মায়, যার নরবলি ব্যতীত আৱ-কোনো উপায়ে ক্ষুধাতৃষ্ণা নিবারণ করা যায় না ; এবং সে বুভুক্ষিত থাকলে গৃহস্থের ঘাড় মটকে খায়। বৈজ্ঞানিকদের আবিষ্কৃত সমাজ-নামক বিরাটপুরুষ এই জাতীয় একটি প্রেতিযোনি বৈ আর-কিছুই নয়। এই বিরাট-কবন্ধের শোণিত-পপাসা নিবারণার্থ নরবলি দেওয়া ধর্মপ্ৰাণ ব্যক্তিদের অবশ্যকর্তব্য। বলা বাহুল্য, পৃথিবীতে যতগুলি বিভিন্ন সমাজ আছে, ততগুলি পৃথক বিরাটপুরুষও আছে। এবং এহ-সকল নরমাংস-লোলুপ দৈত্যদের মধ্যে চিরশত্রুত বিদ্যমান। সুতরাং মানুষের প্রথম এবং প্ৰধান কর্তব্য- নিজ-সমাজের নিকট পর-সমাজকে বলি দেওয়া, অর্থাৎ যুদ্ধ করা। এই মতাবলম্বী বৈজ্ঞানিকরা মানবের নৈতিক বুদ্ধির অস্তিত্ব অস্বীকার করেন না, শুধু তার বিকার সাধন ক’রে সেটিকে বিপথে চালাতে চান । এদের সাদা কথা এই যে নিজের স্বার্থের জন্য করলে যে কাজ মহাপাপ, জাতীয় স্বার্থের জন্য করলে সেই একই কাজ মহাপুণ্য। সমাজ-নামক অপদেবতাকে নিবেদন করে দিলে খুন জখম চুরি ডাকাতি ফুলের মতো শুভ্র দীপের ন্যায় উজ্জল ধুপের ন্যায় সুরভি হয়ে ওঠে। বহু মানবকে একত্রে যোগ দিলে কী ক’রে একটি দানবের স্বষ্টি হয় তা আমাদের স্ত্ৰীবুদ্ধির অতীত। আর এই কথাটা জিজ্ঞাস্ত থেকে যায় যে, লোকসমষ্টিকে সমাজ নাম দিয়ে তার উপরে ব্যক্তিত্ব আরোপ করার যদি কোনাে বৈধ কারণ থাকে তা হলে এই ব্যক্তিটির অন্তরে একটি আত্মার আরোপ করা কী কারণে অবৈধ ? এই বিরাটপুরুষকে মানবধর্মী কল্পনা করলে আমাদের সহজ ন্যায় বুদ্ধিকে ডিগবাজি-খাওয়ার জন্য তোমাদের আর এত গলদঘর্ম হতে হত না ।