পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চুটুকি SRs বসেছেন । তাই যদি হয়, তা হলে বরেন্দ্ৰভূমিকে ছোট দেওয়া হল কেন। শুনতে পাই বাংলার অসংখ্য প্রত্নরাশি বরেন্দ্ৰভূমি নিজের বুকের ভিতর লুকিয়ে রেখেছে। বাংলার পূর্বগৌরবের পরিচয় দিতে গিয়ে বাংলার যে ভূমি সবচেয়ে প্ৰত্নগর্ভা, সে প্রদেশের নাম পর্যন্ত উল্লেখ না করবার কারণ কী। যদি এই হয় যে, পূর্বে উত্তরবঙ্গের আদৌ কোনো অস্তিত্ব ছিল না, এবং থাকলেও সে দেশ বঙ্গের বহির্ভূত ছিল, তা হলে সে কথাটাও বলে দেওয়া উচিত। নচেৎ বরেন্দ্র-অনুসন্ধান-সমিতি আমাদের মনে একটা ভুল ধারণা এমনি বদ্ধমূল করে দেবে যে, তার 'আমূল পরিবর্তন’ কোনো চুটুকি ইতিহাসের দ্বারা সাধিত হবে না। শাস্ত্রীমহাশয় যে তাম্রশাসনে শাসিত নন, তার প্রমাণ তিনি পাতায় পাতায় বলেন, ‘আমি বলি” “আমার মতে’ এই সত্য। এর থেকেই প্ৰমাণ পাওয়া যায় যে, শাস্ত্রীমহাশয়ের ইতিহাস বস্তুতন্ত্রতার ধার ধারে না, অর্থাৎ এক কথায় তা কাব্য ; এবং যখন তা কাব্য, তখন তা যে চুটুকি হবে তাতে আর আশ্চৰ্য কি। শাস্ত্রীমহাশয়ের, দেখতে পাই, আর-একটি এই অভ্যাস আছে যে, তিনি নামের সাদৃশ্য থেকে পৃথক পৃথক বস্তু এবং ব্যক্তির ঐক্য প্ৰমাণ করেন। একীকরণের এ পদ্ধতি অবশ্য বৈজ্ঞানিক নয়। কৃষ্ট এবং খৃস্ট, এ দুটি নামের যথেষ্ট সাদৃশ্য থাকলেও ও-দুটি অবতারের প্রভেদ শুধু বর্ণগত নয়, বর্গগতও বটে। কিন্তু শাস্ত্রীমহাশয়ের অবলম্বিত পদ্ধতির এই একটি মহাগুণ যে, ঐ উপায়ে অনেক পূর্বগৌরব আমাদের হাতে আসে, যা বৈজ্ঞানিক হিসেবে ন্যায়তা অপবের প্রাপ্য। কিন্তু উক্ত উপায়ে অতীতকে হস্তান্তর করার ভিতর বিপদও আছে। এক দিকে যেমন গৌরব আসে, অপর দিকে তেমনি অগৌরবও আসতে পারে। আগৌরব শুধু যে আসতে পারে। তাই নয়, বস্তুত এসেওছে । স্বয়ং। শাস্ত্রী মহাশয় ‘ঐতরেয় আরণ্যক” হতে এই সত্য উদ্ধার করেছেন যে, প্ৰাচীন আর্যেরা বাঙালিজাতিকে পাখি বলে গালি দিতেন। সে বচনটি এই-- ‘বয়াংসি বঙ্গাবগধাশোচরপাদা” প্রথম-পরিচয়ে আর্যেরা যে বাঙালিজাতির সম্বন্ধে অনেক অকথা কুকথা বলেন, তার পরিচয় আমরা এ যুগেও পেয়েছি, wide Macaulay । সুতরাং প্ৰাচীন আর্যেরাও যে প্রথম-পরিচয়ে বাঙালিদের প্রতি নানারূপ কটুকাটিব্য প্রয়োগ করেছিলেন, এ° কণা সহজেই বিশ্বাস হয়। তবে এ ক্ষেত্রে এই সন্দেহ উপস্থিত হয় যে, যদি গালি দেওয়াই তাদের অভিপ্ৰায় ছিল, তা হলে আর্যেরা আমাদের পাখি বললেন কেন। পাখি বলে গাল দেবার প্রথা তো কোনো সভ্যসমাজে প্রচলিত দেখা যায় না। বরং “বুলবুল” ଈ