পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যে খেলা УVOVO প্ৰভেদ নাই। রাজার ছেলের সঙ্গে দরিদ্রের ছেলেরাও খেলায় যোগ দেবার অধিকার আছে । আমরা যদি একবার সাহস করে কেবলমাত্র খেলা করবার জন্য সাহিত্যজগতে প্ৰবেশ করি, তা হলে নির্বিবাদে সে জগতের রাজারাজড়ার দলে মিশে যাব। কোনোরূপ উচ্চ আশা নিয়ে সে ক্ষেত্রে উপস্থিত হলেই নিম্ন শ্রেণীতে পড়ে যেতে হবে। R লেখকেরাও অবশ্য দলের কাছে হাততালির প্রত্যাশা রাখেন, বাহবা না পেলে মনঃক্ষুন্ন হন ; কেননা, তঁরাই হচ্ছেন যথার্থ সামাজিক জীব, বাদবাকি সকলে কেবলমাত্র পারিবারিক। বিশ্বমানবের মনের সঙ্গে নিত্যনূতন সম্বন্ধ পাতানোই হচ্ছে কবি-মনের নিত্যনৈমিত্তিক কর্ম। এমন-কি, কবির আপন মনের গোপন কথাটিও গীতিকবিতাতে রঙ্গভূমির স্বগতোক্তিস্বরূপেই উচ্চারিত হয়, যাতে করে সেই মর্মকথা হাজার লোকের কানের ভিতর দিয়ে মরমে প্ৰবেশ করতে পারে। কিন্তু উচ্চমঞ্চে আরোহণ করে উচ্চৈঃস্বরে উচ্চবাচ্য না করলে যে জনসাধারণের নয়ন-মন আকর্ষণ করা যায় না, এমনকোনো কথা নেই। সাহিত্যজগতে যাদের খেলা করবার প্রবৃত্তি আছে, সাহস আছে ও ক্ষমতা আছে - মানুষের নয়ন-মন আকর্ষণ করবার সুযোগ বিশেষ করে তাদের কপালেই ঘটে । মানুষে যে খেলা দেখতে ভালোবাসে, তার পরিচয় তো আমরা এই জড় সমাজেও নিত্যই পাই । টাউন-হলে বক্তৃতা শুনতেই বা ক’জন যায়- আর গড়ের মাঠে ফুটবল-খেলা দেখতেই বা ক’জন যায়। অথচ এ কথাও সত্য যে, টাউন-হলের বক্তৃতার উদ্দেশ্য অতি মহৎ- ভারত উদ্ধার; আর গড়ের মাঠের খেলোয়াড়দের ছুটোছুটি দৌড়াদৌডি আগাগোড়া অৰ্থশূন্য এবং উদ্দেশ্যবিহীন। আসল কথা এই যে, মানুষের দেহমনের সকলপ্রকার ক্রিয়ার মধ্যে ক্রীড়া শ্রেষ্ঠ ; কেননা, তা উদ্দেশ্যহীন । মানুষে যখন খেলা করে, তখন সে এক আনন্দ ব্যতীত অপর কোনো ফলের আকাজক্ষা রাখে না। যে খেলার ভিতর আনন্দ নেই। কিন্তু উপরি-পাওনার আশা আছে, তার নাম খেলা নয়, জুয়াখেলা। ও-ব্যাপার সাহিত্যে চলে না ; কেননা, ধর্মত জুয়াখেলা লক্ষ্মীপূজার অঙ্গ, সরস্বতীপূজার নয়। এবং যেহেতু খেলার আনন্দ নিরর্থক অর্থাৎ অর্থগত নয়, সে কারণ তা কারো নিজস্ব হতে পারে না। এ আনন্দে সকলেরই অধিকার সমান । সুতরাং সাহিত্যে খেলা করবার অধিকার যে আমাদের আছে, শুধু তাই নয়—r স্বাৰ্থ এবং পরার্থ এ দুয়ের যুগপৎ সাধনের জন্য মনোজগতে খেলা করাই হচ্ছে আমাদের পক্ষে সর্বপ্ৰধান কর্তব্য। যে লেখক সাহিত্যক্ষেত্রে ফলের চাষ করতে ব্ৰতী