পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S \exp বীরবিলের হালখাতা স্কুল এবং তার মাস্টার । কাব্য পড়বার ও বোঝবার জিনিস ; কিন্তু স্কুলমাস্টারের কাজ হচ্ছে বই পড়ানো ও বোঝানো । লেখক এবং পাঠকের মধ্যে এখন স্কুলমাস্টার দণ্ডায়মান । এই মধ্যস্থদের কৃপায় আমাদের সঙ্গে কবির মনের মিলন দূরে যাক, চারচক্ষুর মিলনাও ঘটে না। স্কুলঘরে। আমাদের কাব্যের রূপ দেখতে পাই নে, শুধু তার গুণ শুনি। টীকা-ভায্যের প্রসাদে আমরা কাব্য সম্বন্ধে সকল নিগুঢ়তত্ত্ব জানি ; কিন্তু সে যে কী বস্তু, তা চিনি নে । আমাদের শিক্ষকদের প্রসাদে আমাদের এ জ্ঞান লাভ হয়েছে যে, পাথুরে কয়লা হীরার সবর্ণ না হলেও সগোত্র ; অপর পক্ষে, হীরক ও কঁাচ যমজ হলেও সহােদর নয়। এর একের জন্ম পৃথিবীর গর্ভে, অপরটির মানুষের হাতে ; এবং এ উভয়ের ভিতর এক দা-কুমড়ার সম্বন্ধ ব্যতীত অপর-কোনো সম্বন্ধ নেই। অথচ এত জ্ঞান সত্ত্বেও আমরা সাহিত্যে কঁাচকে হীরা এবং হীরাকে কঁচ বলে নিত্য ভুল করি ; এবং হীরা ও কয়লাকে একশ্রেণীভুক্ত করতে তিলমাত্র দ্বিধা করি নে ; কেননা, ওরূপ করা যে সংগীত, তার বৈজ্ঞানিক প্ৰমাণ আমাদের মুখস্থ আছে। সাহিত্য শিক্ষার ভার নেয় না, কেননা মনোজগতে শিক্ষকের কাজ হচ্ছে কবির কাজের ঠিক উলটো । কবির কাজ হচ্ছে কাব্য সৃষ্টি করা, আর শিক্ষকের কাজ হচ্ছে প্ৰথমে তা বধ করা, তার পরে তার শবচ্ছেদ করা— এবং ঐ উপায়ে তার তত্ত্ব আবিষ্কার করা ও প্রচার করা । এই-সব কারণে নিৰ্ভয়ে বলা যেতে পারে যে, কারো মনোরঞ্জন করাও সাহিত্যের কাজ নয়, কাউকে শিক্ষা দেওয়াও নয়। সাহিত্য ছেলের হাতের খেলনাও নয়, গুরুর হাতের বেতাও নয় । বিচারের সাহায্যে এই মাত্ৰই প্ৰমাণ করা যায়। তবে বস্তু যে কী, তার জ্ঞান অনুভূতিসাপেক্ষ, তর্কসাপেক্ষ নয়। সাহিত্যে মানবাত্মা খেলা করে এবং সেই খেলার আনন্দ উপভোগ করে ; এ কথার অর্থ যদি স্পষ্ট না হয়, তা হলে কোনো সুদীর্ঘ ব্যাখ্যার দ্বারা তা স্পষ্টতর করা আমার অসাধ্য । এই-সব কথা শুনে আমার জনৈক শিক্ষাভক্ত বন্ধু এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। যে, সাহিত্য খেলাচ্ছলে শিক্ষা দেয়। এ কথার উত্তরে আমার বক্তব্য এই যে, সরস্বতীকে কিণ্ডারগার্টেনের শিক্ষয়িত্রীতে পরিণত করবার জন্য যতদূর শিক্ষণবান্তিকগ্ৰস্ত হওয়া দরকার, আমি আজও ততদূর হতে পারি নি। ere y \RR