পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SVr বীরবলের হালখাতা রচনা করা যায় না, এ ধারণা অমূলক। উপর-উপর দেখলেই এ দেশের শিক্ষিত লোক এবং অশিক্ষিত স্ত্রীলোকের বিদ্যাবুদ্ধির প্রভেদ মস্ত দেখায় ; কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলেই দেখা যায় যে, আমরা মনে সকলেই এক। মনোরাজ্যে যে আমাদের লিঙ্গভেদ নেই, বৰ্ণভেদ নেই, বয়োভেদ নেই- তার প্রমাণ হাতে-কলমে দেখানো যেতে পারে। ‘ঘরেবাইরে' লেখবার কৈফিয়ত তলব করে একটি ভদ্রমহিলা রবীন্দ্রনাথকে যে পত্র লিখেছিলেন, তা যে-কোনো এম. এ. পাস-করা প্রোফেসর লিখতে পারতেন, এবং উক্ত গল্প পাঠ করে একটি এম. এ. পাস-করা প্রোফেসরের মনে যে সমস্যার উদয় হয়েছে, তা যে-কোনো ভদ্রমহিলার মনে উদয় হতে পারত। অতএব যে-কোনো শিকারী সাহিত্যিক একটি বাক্য-বাণে এ দুটি পাখিকেই বিদ্ধ করতে পারেন। বস্তুগত্যা আমাদের মন হচ্ছে হরীতকী-জাতীয় ; শিক্ষার গুণে সে মন পাকে না, শুধু শুকিয়ে যায়। সুতরাং বাংলার অশিক্ষিত স্ত্রীলোক ও শিক্ষিত পুরুষ- এ দুয়ের মনের ভিতর প্রভেদ এই যে, এর একটি কঁচা আর অপরটি শুকনো। দেশসুদ্ধ লোক সেই শিক্ষা চান, যে শিক্ষার গুণে স্ত্রীপুরুষ সকলের মন সমান শুকিয়ে ওঠে। কেননা, হরীতকী যত বেশি শুকোয়, যত বেশি তিতে হয়, তত বেশি উপকারী হয়। অপর পক্ষে রবীন্দ্ৰনাথ সেই শিক্ষার সন্ধানে ফিরছেন, যে শিক্ষার প্রভাবে আমাদের মন-হরীতকী পেকে উঠবে, এবং যার আস্বাদ গ্ৰহণ ক’রে স্বজাতি অমরত্ব লাভ করবে। এ ক্ষেত্রে দেশের শিক্ষিতসম্প্রদায়ের সঙ্গে রবীন্দ্ৰনাথের মতের মিল হবার কোনো সম্ভাবনা নেই ; কেননা, উভয়ের আদর্শ সম্পূর্ণ বিভিন্ন। আমাদের পক্ষে কী শিক্ষা ভালো, তা নির্ণয় করবার পূর্বে- আমরা কী হতে চাই, সে বিষয়ে মনঃস্থির করা আবশ্যক। কেননা, একটা স্পষ্ট জাতীয় আদর্শ না থাকলে জাতীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে না। ধরুন, যদি অশ্বত্ব-লাভ-করা গর্দভদের জাতীয় আদর্শ করে তোলা যায়, তা হলে অবশ্য সে জাতির শিক্ষকেরাও তাদের জন্য পেটনের ব্যবস্থা করবেন ; অপর পক্ষে গর্দভত্ব লাভ করা যদি অশ্বদের জাতীয় আদর্শ করে তোলা যায়, তা হলে সে জাতির শিক্ষকেরাও তাদের জন্য ঐ পেটনেরই ব্যবস্থা করবেন । হয় গাধা-পিটে-ঘোড়া, নয় ঘোড়া-পিটে-গাধা করাই যে শিক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য- সাধারণত এইটেই হচ্ছে লোকের ধারণা। এবং আমরা এই উভয়ের মধ্যে যে কোন জাতীয়, সে বিষয়ে দেশে-বিদেশে বিষম মতভেদ থাকলেও পেটন দেওয়াটাই যে শিক্ষা দেবার একমাত্র পদ্ধতি সে বিষয়ে বিশেষ-কোনো মতভেদ নেই। কাজেই আমাদের শিক্ষকেরা এক হাতে সংস্কৃত, আর-এক হাতে ইংরেজি ধরে আমাদের উপর দু হাতে চাবুক চালাচ্ছেন। এর ফলে কত গাধা ঘোড়া এবং কত